পাণ্ডাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজা কমিটির মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে।
জলপাইগুড়ির অন্যতম প্রাচীন পুজো কমিটি পাণ্ডাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো। এই পুজো কমিটির এবারের থিম টেরাকোটা শিল্প। এ বার পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের মণ্ডপ তৈরি করছেন। চার জন শিল্পীর কাজে গড়ে উঠছে মণ্ডপটি। মন্ডপ সজ্জার পরিকল্পনা করছেন ইসলামপুরের প্রতুল সাহা। প্রতিমা গড়েছেন জলপাইগুড়ির মহাদেব পাল। সেই প্রতিমার গায়ে উঠছে কৃষ্ণনগরের স্বপন পালের তৈরি গহনা। মন্ডপের ভেতরটা সাজাবেন কৃষ্ণনগরের আরএক শিল্পী বাচ্চু পাল।
সমস্ত কাজ হচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরকে কেন্দ্র করে। সেখানে মাটি পুড়িয়ে ফ্রেম তৈরি করা হচ্ছে। সেই ফ্রেম জলপাইগুড়িতে নিয়ে এসে মণ্ডপে বসানো হচ্ছে। পোড়ামাটির ওপর আলপনা থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ থাকছে। এ ছাড়া থাকবে সোনালি রঙের পোড়ামাটির বাহারি প্রদীপ। সেই প্রদীপগুলি কাৎ করে পোড়ামাটির উপর দেওয়ালে বসানো থাকবে। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে নানা ধরনের পৌরাণিক মূর্তি। তার সঙ্গে দেওয়ালে থাকবে আঁকার কাজ। যেটা সম্পন্ন করবেন কৃষ্ণনগরের একজন শিল্পী।
মণ্ডপ ছাড়াও আলোর আলাদা কাজ হবে। সেটাও করবেন ইসলামপুরের একজন শিল্পী। তার নাম গণেশ দাস। জলপাইগুড়ি হলদিবাড়ি সড়কের ধারে এই পুজো কমিটির মণ্ডপ। মণ্ডপে ঢোকার আগে এই রাস্তাটির উত্তর এবং দক্ষিণে দুটি গেট তৈরি করা হচ্ছে। একটির উচ্চতা ৪৫ ফুট এবং অন্যটি ৩৮ ফুট। দুটো গেটই হবে আলোর আলপনায় মাখা। এদের মণ্ডপটি লম্বায় ৬৫ ফুট এবং উচ্চতায় ৪০ ফুট। প্রতিমা চওড়ায় ২২ ফুট এবং উচ্চতা হবে ১৭ ফুট।
পুজো কমিটি সুত্রে জানা যায় পাণ্ডাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো ৮৭ বছরের পুরোন। ১৯২৯ সালে পাণ্ডাপাড়ায় প্রথম দুর্গাপুজো হয়। তখন এখানে লোকবসতি বিশেষ ছিল না। যে ক’জন লোক বাস করতন, তাঁরা সকলেই জলপাইগুড়ি হলদিবাড়ি সড়কের ধারে বসবাস করতেন। প্রথমে এই পুজোটি বর্তমান স্থানে হত না। প্রথমে বর্তমান জায়গার উত্তর দিকে একটি বাড়ি সংলগ্ন প্রাঙ্গণে কিছু দিন পুজো হয়েছিল। তারপর দক্ষিণ দিকে একটি জায়গায় কয়েক বছর পুজো হয়। তখন হ্যাজাক জ্বালিয়ে পুজো হত। বর্তমান জায়গায় পুজো হচ্ছে ১৯৫২ সাল থেকে। পাণ্ডাপাড়ার পুজো যাঁরা শুরু করেছিলেন, তারা এখন সবাই প্রয়াত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোহনলাল রায়, মনমোহন ঠাকুর, শ্রীরাম সিংহ এবং ঝন্টু চক্রবর্তী।
পুজো কমিটির মুখপাত্র মাধব বসু বলেন, “আমাদের এখানে থিম পুজো শুরু হয় ১৯৯২ সাল থেকে। তার আগে পুজো হত। তবে ডেকরেশনের অত আড়ম্বর ছিল না। ১৯৯২ সালের পর থেকে আমাদের পুজো জলপাইগুড়ির বড় পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম পুজো হিসেবে একটা জায়গা করে নিয়েছে।”
চতুর্থীর দিন দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হবে। সেদিন এখানে বাউল গানের আসর বসবে। এ ছাড়াও অন্য শিল্পীরাও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। একটা আনন্দমুখর জলসার মধ্য দিয়ে এবার এই পুজো কমিটির দুর্গাপুজোর শুভ সূচনা হবে।
—নিজস্ব চিত্র।