রোজ তিন কিলোমিটার হেঁটে এ ভাবেই রায়মাটাং নদী থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হয় কালচিনির বিজয়পুর বস্তির বাসিন্দাদের।—নিজস্ব চিত্র।
প্রতিদিন অন্তত ৩ কিলোমিটার পথ পাহাড় জঙ্গল ডিঙিয়ে যেতে হয় ওঁদের। রায়মাটাং নদীর কাছে। জলের খোঁজে। জঙ্গলে মাঝেমধ্যেই মুখোমুখি হতে হয় হাতির পালের। গোটা একটা গ্রামের মানুষকে দৈনিক এই লড়াইটা চালাতে হয় শুধুমাত্র পানীয় জলের জন্য। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের রায়মাটাং পাহাড়ের কাছে বিজয়পুর বস্তিতে পানীয় জলের এই সঙ্কটের কথা প্রশাসনের আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি কারোই অজানা নয়। তবুও সমস্যার সমাধান হয়না। এমনটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের।
বিজয়পুর বস্তি, গাঙ্গুটিয়া, বক্সা, ২৮ মাইল, জয়ন্তী সহ এই বিস্তীর্ন এলাকায় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। গাঙ্গুটিয়া বস্তিতে পানীয় জলের দু’টি নলকূপ বসানো হলেও একটি অকেজো হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। ২৮ মাইল বস্তি ও জয়ন্তী এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে নদীর জল আসে। আরএসপি নেতা রামকুমার লামা বলেন, “২৮ মাইল এলাকায় নতুন করে পাইপ লাইন বসানোর প্রয়োজন রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা নদীর জলের উপর নির্ভরশীল। বর্ষায় নদীর জল ঘোলা হয়ে যায়। তখন সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। অনেক সময় হাতি এসে জলের পাইপ লাইন ভেঙে দেয়। তবে বিজয়পুর বস্তিতে সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত কোন নলকূপ বসানো হয়নি। জল কষ্টে ভুগতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।”
পানীয় জলের অন্য কোনও উত্স নেই। সে কারণে প্রতিদিনই এখানকার বাসিন্দাদের জল সংগ্রহ করতে যেতে হয় রায়মাটাং নদী অথবা ভাটপাড়া চা বাগান এলাকায়। সাইকেলের দু’দিকে জ্যারিকেন ঝুলিয়ে অথবা হাতে করে জলের পাত্র বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা, এটা এই এলাকার একটা পরিচিত ছবি। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপনা থাপা ও কৃষ্ণ রাইদের অভিযোগ, “এলাকায় প্রায় ৫০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। প্রতিদিন পানীয় জলের জন্য তাঁদের ৩ কিলোমিটার দূরে রায়মাটাং নদীতে যেতে হয়। রাস্তায় রায়মাটাং জঙ্গল রয়েছে, সেখানে মাঝেমধ্যেই হাতির মুখোমুখি পড়তে হয়।” পরিশ্রুত জলের অভাবে নিত্যদিন পেটের রোগে ভোগেন বাসিন্দারা।
রায়মাটাং পাহাড় লাগোয়া খাসবস্তি এলাকায় মাটির নীচে বড় পাথরের স্তর থাকায় নলকূপ তৈরিতে সমস্যা রয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা বলেন, “ওই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। বিষয়গুলি আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা হবে।” কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রামারি বলেন, “বিজয়পুর বস্তিতে নলকূপ বসানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মাটির নীচে পাথর থাকায় তা বাসানো সম্ভব হয়নি। পাহাড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বস্তিতে জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।”