প্রদীপ প্রধান
প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন জিটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধান। তিনি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সহ সভাপতিও। মঙ্গলবার গভীর রাতে শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ের একটি হোটেল থেকে তাঁকে নিয়ে মোট ১১ জনকে ধরেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মোর্চার ছাত্র সংগঠন বিদ্যার্থী মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দীপ থাপাও। প্রদীপবাবু ও মোর্চা নেতাদের দাবি, তাঁকে ও দীপবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে।
জলপাইগুড়ির এক ব্যবসায়ী রবি কিথানিয়া মঙ্গলবার রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ১৮১৮ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি মুদ্রা তাঁকে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। মুদ্রাটি সরকারি সংগ্রহশালায় জমা দিলে ওই ব্যবসায়ী ১৩ লক্ষ টাকা কমিশন পাবেন বলেও ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বিশ্বাস করে রবিবাবু ওই চক্রের হাতে অগ্রিম হিসাবে ৫০ হাজার টাকা তুলেও দেন। মঙ্গলবার ওই হোটেলে তাঁকে কাচের বাক্সে ভরা সেই মুদ্রাটি দেওয়া হয়। রবিবাবু অবশ্য ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে প্রাচীন মুদ্রার এক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি কিন্তু ওই মুদ্রাটি দেখে জানিয়ে দেন, তা জাল।
এরপরেই রবিবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ গিয়ে ওই হোটেল থেকে প্রদীপবাবু সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। প্রদীপবাবুর যদিও দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। প্রদীপবাবুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, দলের ছাত্র সংগঠন বিদ্যার্থী মোর্চার কয়েকজন কর্মী সমর্থকই তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। সাংগঠনিক আলোচনার কথা বলে প্রদীপবাবু ও দীপ থাপাকে ওই হোটেলে তারাই ডেকে নিয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ীর কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই প্রদীপবাবু ও দীপবাবুকে সামনে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মোর্চার নেতাদের দাবি।
বুধবার ধৃতদের শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হলে, প্রদীপবাবু ও দীপবাবু সহ ৯ জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি দু’জন সচিন বিশ্বকর্মা এবং সঞ্জীব মৈত্রকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সকলকেই আগামী ৯ মার্চ আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সচিন বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থক। এই চক্রের সেই মূল পাণ্ডা বলে পুলিশের অনুমান।
তবে এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। মোর্চার সহ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গর অভিযোগ, “গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে ধামাচাপা দিতেই প্রদীপবাবু ও দীপবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, দিল্লিতে মোর্চার ধর্নায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন প্রদীপবাবু ও দীপবাবু। সেই জন্যই তাঁরা শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন, তারপরে তাঁদের গ্রেফতার করা হল। মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গও বলেন, “কী মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জানি না। তবে যদি বিষয়টি রাজনৈতিক হয়, তা হলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, রাজ্য সরকার কখনওই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে না। জিটিএ-র সঙ্গেও সরকারের সুসম্পর্কও রয়েছে। তাঁর কথায়, “প্রদীপবাবুর গ্রেফতারি নিয়ে রাজনৈতিক অভিযোগ তোলা হলে, তা দুর্ভাগ্যজনক।”