নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল ইটাহারের পাড়াহরিপুরে। সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ তার দেহ গাছে ঝুলতে দেখেন তার পরিবারের লোকজন।
কিশোরীর বাবা-মায়ের সন্দেহ, শারীরিক অত্যাচারের পরে তাকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিখিত কোনও অভিযোগ না করলেও পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু না করে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ দায় এড়াতেই ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করেনি। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার অবশ্য দাবি, “ওই কিশোরীর বাবা কারওর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেননি। তাঁর স্ত্রী বকাবকি করায় অভিমানে তাঁর মেয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে মেয়েটির বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি আরও বলে জানান, পুলিশকে না জানিয়ে কেনও পরিবারের লোকজন ওই কিশোরীর মৃতদেহ নীচে নামিয়েছিলেন, সেই বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে পড়াশোনা করত মেয়েটি। তার বাবা-মা দু’জনেই দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁদের চার মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে এই মেয়েটিই ছোট। তিন দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই দাদা দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করেন। ছাত্রীর মায়ের দাবি, “রাত ২টো নাগাদ আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, মেয়ের ঘরের দরজা খোলা। সে বিছানায় নেই। খোঁজাখুজি শুরু করি। সকালে বাড়ির পাশের একটি গামার গাছে মেয়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পাই।” মেয়েটির বাবা বলেন, “মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের পর দেখি, মুখ অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে। ওকে মারধর ও অত্যাচার করার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আমার সন্দেহ।” ছাত্রীর মা জানান, তিনি মেয়েকে ধান ঝাড়তে বলেছিলেন। সে তা না করায় বকেছিলেন। তাঁর কথায়, “বাড়িতে কাজ না করলে তো অনেক সময়েই বকি। সে জন্য ও এমন করবে তা ভাবাই যায় না।”
বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাতায়াতের পথে ও এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় তাঁরা ছাত্রীর সঙ্গে এক যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন। সম্প্রতি বাড়ির লোকজন তার বিয়ে ঠিক করেন। দু’বছর বাদে বিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়ির লোকজন পাত্রও ঠিক করেন। মেয়েটির দিদির বক্তব্য, “আমার বোন ১৮ বছর হওয়ার পর ওই পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। এর পরে সে কেন আত্মহত্যা করবে?” বাড়ির লোকজনদের দাবি, যে যুবকের সঙ্গে ছাত্রীটিকে দেখা যেত, তাঁকে খুঁজে বের করে জেরা করুক পুলিশ।