পাহাড়ের চা বাগিচা এলাকাগুলিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের অভিযোগ, সঠিক পদ্ধতিতে বাগানগুলিতে কাজ করা হচ্ছে না। অনেক সময়ই নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সামনে আসছে। এতে আগামী বর্ষার মরশুমে চা বাগানগুলিকে ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাগানের শ্রমিক পরিবার-সহ বাসিন্দাদের বিপদের মুখে পড়বেন। শুক্রবার সংগঠনের তরফে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রশনের (জিটিএ) স্পেশাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট-এর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগের অধীণেই পাহাড়ে প্রকল্পের কাজ চলছে।
পাহাড়ের অধিকাংশ চা বাগানই দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। এদিন স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাহাড়ে লোপচু চা বাগান কর্তৃপক্ষও ছিলেন। বাগানটি শৈলশহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে। লোপচু বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই প্রকল্পে বাগানে নিকাশি নালা ভেঙে রাস্তা তৈরির কাজ করা হয়েছে। এতে বর্ষার ধস নামার সম্ভাবনা শুধু না জলে জমে বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তাতে শ্রমিক বস্তি বা চা বাগিচার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “লোপচু বাগানের পরিস্থিতির কথা জিটিএকে জানানো হয়েছে। সঠিকভাবে কাজই হচ্ছে। আর যা হয়েছে, তা ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ষার সময়ই তৈরি হতে পারে। জিটিএ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” তিনি জানান, বাগানে ভেঙে ফেলা নিকাশি নালাগুলি দ্রুত মেরামত করার জন্যই বলা হয়েছে। আর শুধু লোপচু চা বাগান নন, বহু বাগানেই এই অবস্থা চলছে। আমরা বলছি, বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার পর ঠিকঠাক সমীক্ষা করে কাজ করতে।
জিটিএ সূত্রের খবর, গত ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে লোপচু চা বাগানে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার কাজ শুরু হয়েছে। এরজন্য ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাগানের ভিতর দিয়ে চার কিলোমিটার রাস্তাটি তৈরির কাজ শেষ হলে, পেশকের সঙ্গে সামবাঙের যোগাযোগ তৈরি হয়ে যাবে। ৯৬ হেক্টরের বাগানের শ্রমিক সংখ্যা ৩৬৫ জন। রয়েছে একাধিক শ্রমিক কলোনিও। বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে নিকাশি নালা সঠিকভাবে না থাকায় ধসে নামলে বাগানের অন্তত ৫ হেক্টর এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।
চা মালিকদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, পাহাড়ের অন্তত ১৬টি চা বাগানে ওই প্রকল্পে রাস্তার কাজ চলছে। প্রতিটি বাগানেই এই ধরণের সমস্যা হয়েছে। কয়েক জায়গায় কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলে শ্রমিকদের থেকেই খবর মিলছে। আবার কয়েক জায়গায় রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে চা গাছ যেভাবে উপড়ে ফেলা হয়েছে তাতে ভঙ্গুর পাহাড়ি মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তা ঠিকঠাকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অ্যাভেনগ্রোভ, রিশিহাট, মারিবং, লিসাহিল চা বাগানে লোপচুর মতই সমস্যা হয়েছে। জিটিএ-র সেগুলিও জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জিটিএ-র স্পেশাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর সহকারি বাস্তুকার অবদুল নয়ন বলেন, “আমরা আইনে যা রয়েছে তা মেনেই চা বাগানগুলিতে রাস্তার কাজ করছি। চা বাগান মালিকদের বক্তব্য সঠিক নয়। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নূন্যতম ৬ মিটার চওড়া রাস্তা করতে হয়। সেই ভাবে রাস্তা হলেও যেখানে প্রয়োজনে সেখানে নিকাশি রাখা হচ্ছে। আর রাস্তার দুই পাশেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এতে ধসের কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
চা বাগান মালিকদের সঙ্গেই পাহাড়ের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পাহাড় কমিটিও। দলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা’র অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীণে রাস্তা, বাড়ি তৈরির কাজ খুবই নিম্নমানের হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এটা বলে আসছি। বরাদ্দের টাকা ঠিকাদারদের নেতাদের দিতেই শেষ হচ্ছে। তাতে কাজ খারাপ হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানাচ্ছি।”
যদিও তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে মোর্চার নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, কাজ সঠিকভাবেই হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা হলে তা সংশোধন করা হবে। তৃণমূল সরকারি কাজ নিয়েই রাজনীতি করছে।