পাহাড়ের তিন বিধানসভার ভোট গণনা কেন্দ্র দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়িতে সরানো নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ দানা বাঁধছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওি সিদ্ধান্তের পক্ষে নানা যুক্তি ও একাধিক জাতীয় রাজনৈতিক দলের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম সহ পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলি তা মানতে নারাজ। পাহাড়ের ওই দলগুলির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দার্জিলিঙে ভোট গণনা কেন্দ্র গড়ার দাবি তোলা হয়েছে। এমনকী, সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী বলেছেন, “পাহাড়ের মানুষের আবেগ বুঝতে হবে প্রশাসনকে। সেটা বুঝলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের ডাকা হতো। আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। তা হয়নি বলেই ক্ষোভ-দুঃখ হচ্ছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসকের ভূমিকায় আমরা ক্ষুব্ধ। এমন চলতে থাকলে বদলি করে দেওয়ার দাবিও তুলতে হবে।”
যদিও দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব ফের দাবি করেছেন, তিনি সর্বদল বৈঠক ডেকেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপরন্তু, বিষয়টি নিয়ে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলি আপত্তি তোলায় তাদের প্রস্তাবও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসকের দাবি। জেলাশাসক বলেন, “আমরা কেন ভোট গণনা কেন্দ্র সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। তা নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের পক্ষ থেকে যে দাবি উঠেছে তাও কমিশনকে জানানো হয়েছে। এখন তা নিয়ে কমিশন যেমন নির্দেশ দেবে তেমনই কাজ হবে।”
ঘটনাচক্রে, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরাও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সরকারি সূত্রের খবর, কমিশনের পর্যবেক্ষকদের নিয়ে পাহাড়ের কয়েকটি এলাকা ঘুরিয়ে দেখানোও হয়েছে। কিন্তু, পর্যবেক্ষকরা তা নিয়ে কমিশনের কাছে কোনও রিপোর্ট পাঠাননি বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। দার্জিলিং লোকসবা কেন্দ্রের অন্যতম পর্যবেক্ষক অলকেশ কুমার শর্মা বলেন, “দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এটা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত কমিশনই নিতে পারে।”
অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি জানান, ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আঞ্চলিক দলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া যে হয়নি সে কথা নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দাবি, “প্রতিটি আঞ্চলিক দলকে ওই বিষয়ে মতামত আদানপ্রদানের জন্য মহকুমা পর্যায়ে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা হাজির হননি।” গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য দাবি করেন, একটা সিদ্ধান্ত জেলা স্তরে হওয়ার পরে মহকুমা স্তরে তা নিয়ে আলোচনা সভা ডাকার কোনও মানে হয় না। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বিষয়টি দেখছেন। আপাতত কারও সমালোচনা করতে চাই না। কারণ, আমরা মনে করি, পাহাড়ের মানুষের দাবি মেনে পাহাড়েই গণনা কেন্দ্র করা হবে।”