তিস্তা ক্যানালের জল মেলে না। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পও চাষের কাজে লাগেনি বলে অভিযোগ দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকদের। নতুন বছরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর খাঁড়ি সংস্কারের উদ্যোগে আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা। বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতি খাঁড়ি সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছে। সমিতির সভাপতি প্রবীর রায় বলেন, “নতুন বছরে প্রকল্পটি রূপায়ণে উদ্যোগী হব।”
এই জেলায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত সেচের আওতায় এসেছে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর। জেলা কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ দিনাজপুরে মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সেচের জল পায়। উত্তর দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি হয়ে হিলি পর্যন্ত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার এলাকার তিস্তার ক্যানাল হওয়ার কথা ছিল। এখনও পর্যন্ত তা না হওয়ায় ওই এলাকার চাষের জমি এখনও পুরোপুরি সেচের আওতায় আসেনি। বালুরঘাটের ডাঙা এলাকার ছোট চাষি রমেন বর্মন, সুদেব বর্মনেরা বলেন, “বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে তিস্তা ক্যানালের মাধ্যমে জল মিলবে বলে শুনছি। নতুন সরকারের আমলে তিস্তার জল মিলবে বলে আশা ছিল। সেটা স্বপ্নই থেকে গেল।”
বালুরঘাটের মালঞ্চা এলাকার ধান চাষি সুকুমার পাহান, রাম ওঁরাও, জীবন রায়দের বক্তব্য, সেচ সম্প্রসারণের জন্য জেলা জুড়ে খাঁড়ি সংস্কারের মাধ্যমে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে জমিতে সেচের একটা বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে। ওই সমস্যার কথা মানছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, এই তিন জেলায় ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে চাষের জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করা হবে।
কিন্তু এই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না চাষিদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজ্যে খরচ হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরে চাষ এখনও বৃষ্টিনির্ভর। এ বছর ১ লক্ষ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টন ধান। সেচের অভাবে জেলায় বোরো ধানের আবাদও কমছে ক্রমশ। কৃষি আধিকারিক উত্পল মণ্ডল বলেন, “জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হত। বর্তমানে তা কমে ২৫-৩০ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া গরমে গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা নদী, বংশীহারি, কুশমণ্ডি ব্লকের টাঙন নদ এবং হিলি ব্লকে যমুনা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় নদীভিত্তিক সেচ প্রকল্পগুলি অকেজো হয়ে গিয়েছে।