মরশুম শুরুর মাস তিনেক আগেই এবার শিলিগুড়ির পুজোর বাজার দখল করতে আসছে ‘ডন’। তবে তার নাগাল পেতে এবার পকেটের কড়ি অনেকটা বেশিই খরচ করতে হবে বলে আশঙ্কা। পুজোর বাজারে যা কোনও ভাবেই ৫০ টাকা কেজির নিচে নামবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি মহকুমার সবচেয়ে বেশি উত্পাদিত এই ফুলকপির পাশাপাশি রাইশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, শসা ও মুলোও পুজোর সময় চড়া দামে বিক্রির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, গত জুলাই মাস থেকে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় সব্জির বীজতলা থেকে মূল জমির ফসল বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
নতুন করে বীজতলা তৈরি করে মূল জমিতে চাষ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়েছেন চাষিরা। দফতর সূত্রের খবর, প্রায় ১১০ হেক্টর জমির ফুলকপি-সহ অন্যান্য সব্জি শিকড় পচা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। টানা কয়েকদিন অতি বৃষ্টি আবার তার পরেই কড়া রোদ। জুলাই মাসের শেষের দুই সপ্তাহ প্রায় ৫৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আবার কোনও কোনও সময় তাপমাত্রাও ৩২-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। এর জেরেই সমস্যা দেখা দেয়। আপাতত কিটনাশক, নিকাশির ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন চাষিরা।
শিলিগুড়ি মহকুমার অন্যতম সহ-কৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ বলেন, “এবার পুজোর সময় চাষিরা একটু বেশি লাভের আশায়, ফুলকপি-সহ কিছু শাক সব্জি আগেই চাষ করেন। কিন্তু হঠাত্ হঠাত্ বেশি বৃষ্টি এবং চড়া রোদের জেরে চাষের ক্ষতি হয়েছে।” তিনি জানান, পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যে খরচ বেশি হয়ে গিয়েছে চাষিদের। এতে বাজারে ওই সমস্ত সব্জি বেশি দামে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতায় রাজ্য দফতরে সব জানানো হয়েছে।
ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, নকশালবাড়ি মিলিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমায় প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে শীতের মরশুমের সব্জি ও শাক চাষ হয়। এরমধ্যে ডন এবং হোয়াইট মার্বেল প্রজাতির ফুলকপি চাষ হয় প্রায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে মূলত শসা, রাইশাক, পালংশাক এবং ধনেপাতা চাষ হয়। শিলিগুড়ি বাজার ছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চল, ভুটান, নেপাল এবং সিকিমের বাজারে ওই শাক-সব্জি পাঠানো হয়। ‘ডন’ প্রজাতির ফুলকপির রং একটু হলদে এবং ওজন প্রায় পাঁচশো গ্রাম। হোয়াইট মার্বেলের আকার কিছুটা বড়, ওজন প্রায় আটশো গ্রাম। প্রায় ৬০ দিন লাগে এগুলির চাষ হতে। অন্যান্য শাক বাজারে আসতে লাগে ২০ থেকে ৩০ দিন।
কৃষি দফতরের হিসাব অনুসারে, প্রতি বিঘাতে ফুলকপির মত সব্জি চাষে ছ’হাজার টাকার মত খরচ হয় চাষিদের। আয় হয় ১৬-১৮ হাজার টাকার মত। পালংশাক, রাইশাক বা ধনেপাতার ক্ষেত্রে এক হাজার স্কোয়ার মিটারে তিন থেকে চারবার ফসল তোলা যায়। তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচের পর প্রতিবার তিন হাজার টাকার কাছাকাছি লাভ হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সবজি বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়েই চাষিরা এই চাষ করেন। কিন্তু এবার পুজোর বাজার ধরতে জুলাই মাস নাগাদ আগাম চাষ করে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। এতে বিঘা প্রতি ২-৩ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। তাই সব্জির দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফাঁসিদেওয়া নয়াহাট এলাকার চাষি মহম্মদ আসিরুল বলেন, “বৃষ্টি ও রোদের জেরে কয়েকবার বীজতলা পাল্টাতে হয়েছে। খরচও বেড়েছে। তবে পুজোয় সব্জি উঠে যাবে বলে আশা করছি।” একইভাবে খড়িবাড়ির গৌরসিংহ জোতের দীনেশ বর্মন বলেন, “আপাতত নিকাশি, কিটনাশক দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। খেতের মাঝেমাঝে বহু সব্জি গাছ পচে গিয়েছে।”
সহ কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, চাষিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না হলেও আগামী মরশুমে তাঁদের কীটনাশক, সার, অনুখাদ্য এবং ধান-গমের বীজ দিয়ে ক্ষতি মেটানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জমি উঁচু করে বাঁশের কাঠামোতে পলি ফ্লিম এবং অ্যাগ্রো শেড নেট দিয়ে কম খরচের আচ্ছাদন তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রথমবার খরচ হলেও পরের তিন চারটি মরশুম চাষিরা নিশ্চিন্তে চাষ করতে পারবেন।