পাঞ্জিপাড়ার সভামঞ্চে দীপা দাশমুন্সি ও সনিয়া গাঁধী। সঙ্গে দীপাদেবীর ছেলে প্রিয়দীপ (মিছিল)। ছবি: তরুণ দেবনাথ
গলার আড় ভাঙেনি এখনও। মা এক বার ডাকতেই বয়ঃসন্ধির আড়ষ্টতা নিয়ে মঞ্চের পিছনের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ছেলেটি।
ধূসর পাঞ্জাবি। সবুজ জহর কোট। গলার তে-রঙা উত্তরীয়টা একবার ঠিকঠাক করে নিয়ে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ম্যায় প্রিয়দীপ দাসমুন্সি। মেরা পিতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি বহোত বিমার হ্যায়।
এক বার ঢোক গিলে নেয়।
তারপর সাবলীল হিন্দিতে ধীরে ধীরে অস্বস্তি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে মিছিল। প্রিয়-পুত্র।
মায়ের জন্য ভোট চেয়ে সদ্য মাধ্যমিক পাশ ছেলেটি তার মিনিট সাতেকের ছোট্ট বক্তব্য শেষে কুড়িয়ে লা মাঠ উপচানো হাততালি।
রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সমর্থনে মঙ্গলবার পাঞ্জিপাড়ায় সভা করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ওই সভাতেই মায়ের জন্য ভোট চেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় সদ্য কিশোর মিছিল। তার কথা ফুরোতেই সবার আগে তাই হাততালি দিতে দেখা যায় খোদ সনিয়াকেও।
দিল্লির একটি স্কুল থেকে এ বারই মাধ্যমিক দিয়েছে সে। এ দিন সনিয়া মঞ্চে এসে বসার মিনিট দশেকের মধ্যেই মাইকের সামনে উঠে এসে দীপার ঘোষণা ছিল, “এ বার কিছু বলবে, প্রিয়-পুত্র প্রিয়দীপ।” মিনিট কয়েকের স্তব্ধতা। তারপরেই মঞ্চের একটি প্লাস্টিকের চেয়ার ছেড়ে উঠে আসতে দেখা যায় ছেলেটিকে।
মাইকের সামনে এসে পকেট থেকে সাদা কাগজের চিরকুটটা বের করে পড়তে থাকে সে। নিজের পরিচয় শেষ করেই মুখ তুলে এক বার প্রশস্ত ময়দানটা দেখে নেয়। তারপর কখনও মোদী কখনও বা নাম না করে নিজের কাকা রায়গঞ্জ কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী পবিত্ররঞ্জন দাশমুন্সি, কাউকেই রেয়াত করে না সে।
মোদী ঔর বিজেপি দেশকো ধরমকে নাম পর তোড়না চাহতা হ্যায়...
হাততালিটা থিতিয়ে আসার আগেই সে ফের শুরু করে দেয়, আর এই কেন্দ্রে যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি আমার কাকা। যে ভাই নিজের অসুস্থ বড় ভাইয়ের সঙ্গ ছেড়ে নিজের স্বার্থে অন্য দলে যোগ দেয়, সে কীভাবে আপনাদের সঙ্গ দেবে?
প্রশ্নটা স্পষ্ট করে দিতেই বোধহয় এ বার স্পষ্ট বাংলায় তার সংযোজন, বাংলায় একটা কথা আছে না চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!
ভাইপোর আক্রমণ শুনে পবিত্রবাবু অবশ্য হাসছেন। বলছেন, “আমি এখনও দাদার সঙ্গেই রয়েছি। আমরা একই পরিবারের সদস্য, আর আমি স্বার্থ ছাড়াই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।”
কপালের ঘাম মুছে পাক্কা রাজনীতিকদের মতোই মিছিলকে বলতে শোনা যায়, ছোট থেকেই শুনে আসছি আমি মন্ত্রী-পুত্র। তবে আমার সব চেয়ে বড় পরিচয় আমি কংগ্রেস পরিবারের সন্তান। এই সম্পর্কেই আমি আপনাদের সঙ্গে বাঁধা পড়তে চাই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরে মা অনেক ‘চুনাওতি’র মুখোমুখি হয়েছেন। লুকিয়ে লুকিয়ে আমি মাকে কাঁদতেও দেখেছি। আপনাদের ভালবাসাই মায়ের প্রেরণা। এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করতে, বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে মাকে সাহায্য করুন, ভোট দিন।
মিছিল মাইক থেকে সরে আসে। হাততালিতে ফেটে পড়ে মাঠ। আর হলুদ শাড়ির খুঁটে এক বার চোখ মুছে নেন দীপা দাশমুন্সি।