এক নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভুটান লাগোয়া ডুয়ার্সের চামুর্চি এলাকা। ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ঘটনার তদন্ত চেয়ে রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চামুর্চি বাজার এলাকায় সার্ক রোডে ওই নাবালিকার দেহ রেখে সড়ক অবরোধ করে রাখেন বাসিন্দারা। বন্ধ হয়ে যায় ভারত-ভুটান সড়ক। অবরোধকারীরা ভুটানগামী অন্তত ৭টি ছোট গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। দু’টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বানারহাট থানার একটি জিপ ভাঙচুর করা হয়েছে। রাতেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে। জনতার ছোড়া ইটে পুলিশের এক ডিএসপি অনিরুদ্ধ ঠাকুর আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বেশি রাতে দেহটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তারপরে অবরোধ উঠে যায়।
ধূপগুড়ি ও নাগরাকাটা থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী প্রথমে ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে জলপাইগুড়ি থেকে দুই কোম্পানি রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নও পাঠানো হয়। সীমান্তে উত্তেজনা থাকায় ভুটানের প্রবেশপথও এ দিন বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল এবং জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক সীমা হালদার ঘটনাস্থলে গেলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান বাসিন্দারা। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে ভুটানের সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়। তবে ঘটনাস্থল রাতে থমথমে হয়ে রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার জানিয়েছেন, ভুটানের সামচি জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাড়ি ভুটানের সামচি জেলা লাগোয়া চামুর্চি চা বাগান এলাকায়। গত তিন বছর থিম্পুর একটি বাড়িতে ওই নাবালিকা পরিচারিকার কাজ করত। গত অক্টোবরে সে বাড়িতে ফেরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে-ই সব থেকে ছোট। সম্প্রতি ফের ওই কিশোরী ভুটানের সামচি শহরে পরিচারিকার কাজ পায়।
গত শুক্রবার বিকালে সেই কাজেই ওই নাবালিকা সামচির এক স্কুল শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়েছিল বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। শনিবার রাত এগারোটা নাগাদ ভুটানের ওই বাড়ি থেকে দু’জন এসে মেয়ে অসুস্থ বলে নাবালিকার বাড়িতে খবর দেন। ওই নাবালিকার মা বলেন, “ভুটানে গিয়ে দেখি, মেঝেতে মেয়ে শুয়ে রয়েছে। ডেকেও সাড়াশব্দ পাইনি। তখনই বুঝতে পারি মেয়ে মারা গিয়েছে।”
সে সময় ভুটান পুলিশের এক আধিকারিক ওই নাবালিকার মা-বাবার হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে একটি কাগজে টিপ সই নিয়ে রাখেন বলে পরিবারের অভিযোগ। পরে ভুটানের পুলিশ-সহ বাড়ির দু’জন নিয়ে রাত দু’টো নাগাদ সীমান্ত পেরিয়ে চামুর্চি বাগানের বাড়িতে দেহ পৌঁছে দেয় বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। নাবালিকার দেহের ক্ষত চিহ্ন দেখেই তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়। সে কথা চাউর হতেই রবিবার সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
এ দিন সকাল ন’টা থেকে কিশোরীর দেহ রাস্তায় রেখে অবরোধ শুরু করেন শতাধিক বাসিন্দা। তবু ভুটানের প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি অভিযোগ করে দুপুর ৩টে নাগাদ আটকে পড়া ভুটানগামী গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে অবরোধকারীরা। তবে কোনও যাত্রীকে মারধর করা হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভুটানের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরে শনিবার গভীর রাতে কী ভাবে গেট খুলে গাড়িটিকে ছাড়া হল বা এসএসবি জওয়ানরাই বা কেন দেহটি দেখে সীমান্তে আটকালেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নাবালিকার দিদির কথায়, “আমার বোনকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।” তবে জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “পরিবারের লোকজনকে অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা থানায় যাননি।” এ দিকে ভুটান গেটে পাহাড়ায় থাকা এসএসবি জওয়ানদের কী ভূমিকা ছিল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন ডেপুটি কমান্ডেন্ট গঙ্গা সিংহ উদাবত।
(সহ প্রতিবেদন: বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য)