শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) নানা প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতির টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে পাচার হয়েছে, সন্দেহ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। তা নিয়ে জেরা করতে এসজেডিএ-র প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমারকে ইডি নোটিস পাঠাল। আগামী সপ্তাহেই তাঁকে জেরা করতে চায় ইডি। নবান্ন সূত্রে খবর, ইডি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কিরণকুমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
এসজেডিএ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এবার ইডি-র তদন্তও শুরু হল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ চেয়ারম্যান গৌতম দেব আগেই জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই ওই মামলা সংক্রান্ত যা যা তথ্য ইডি জানতে চেয়েছিল, তার উত্তর পাঠানো হয়েছে। এসজেডিএ-র একাধিক প্রতিনিধি ইডি-র কলকাতার দফতরে গিয়ে কী ভাবে, কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে সেই বিবরণও দিয়েছেন। ইডি জানতে পেরেছে, শিলিগুড়িতে থাকাকালীন প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা বিমান ভাড়া বাবদ খরচ করেছেন আইএএস গোদালা কিরণকুমার। দক্ষিণ ভারতে তাঁর এক আত্মীয়ের জমি কেনা সংক্রান্ত কিছু নথিও মিলেছে বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি।
লোকসভা নির্বাচন মিটতেই সিআইডি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে গতি বাড়াতে চলেছে। ভবানী ভবন সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগেই কিরণকুমারকে জেরার জন্য ডাকা হয়েছিল। তিনি ভবানী ভবনে এসে তদন্তকারী অফিসারদের যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাঁকে আবার ডাকা হতে পারে। এক সিআইডি কর্তার কথায়, “কিরণকুমারের স্ত্রী অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ায় তিনি নির্বাচনের সময় কলকাতা আসতে পারবেন না বলে জানান। এবার তাঁকে টানা জেরা করা হবে।” নবান্নের এক কর্তা জানান, ওই আইএএস অফিসার এখন ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ। দুর্নীতির মামলা না মেটা পর্যন্ত এ ভাবেই থাকতে হবে।
এসজেডিএ-র বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে ঘুষ হিসাবে নেওয়া টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে অন্য কোথাও পাচার হয়েছে কি না, সেই তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে কিরণকুমার ও তাঁর নিকট পরিজনদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ইডি। তাই আরও জেরা করা হবে। প্রসঙ্গত, গোদালা কিরণকুমারের স্ত্রী সামান্যা দেবী নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর সম্পত্তির যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতে জানিয়েছেন যে তাঁর ৬ কিলোগ্রাম সোনা রয়েছে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে টিডিপি প্রার্থীর কাছে সামান্যা দেবী অবশ্য হেরেছেন।
এসজেডিএ মামলায় এখনও পর্যন্ত প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমার ছাড়া গ্রেফতার হয়েছেন এসজেডিএ-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, দুই সহকারী ইঞ্জিনিয়র সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণ কুমার, ঠিকাদার শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্ত, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১৪ জন। এঁরা ছাড়াও জেরার মুখে পড়েছেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার ও তৃণমূলের জলপাইগুড়ির সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিক। এঁদেরকেও ইডি আবার জেরা করতে পারে বলে জানা গিয়েছে।