চাঁচলে সুনসান রাস্তাঘাট। ছবি: বাপি মজুমদার।
দুই দিনাজপুরে বন্ধ ডেকে অপ্রত্যাশিত সাড়া মেলার পর শনিবার মালদহ ও ডুয়ার্সেও বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। বন্ধকে ঘিরে ডুয়ার্সে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি অশান্তির ঘটনা ঘটলেও মালদহের পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। বরং বন্ধ দোকানপাট, ফাঁকা রাস্তা সবমিলিয়ে সকাল থেকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছবিটা ছিল উধাও। এমনকি মালদহের তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর খাস তালুক ইংরেজবাজারেও দোকানপাট খোলেনি, যানবাহনও প্রায় চলেনি। অন্যদিকে চা বাগান খোলা থাকলেও ডুয়ার্সে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল বন্ধ। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের হামলা সত্ত্বেও বন্ধে দুই এলাকাতেই বিপুল সাড়া মিলেছে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কলেজে-কলেজে হামলা চালানোর অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরে ও পরদিন উত্তর দিনাজপুরে ১২ ঘণ্টা বন্ধ ডেকেছিল বিজেপি। তাতে সাড়া মেলার পরে ফের দুটি এলাকায় বন্ধ ডাকা নিয়ে শুক্রবার রাতেই নানা জায়গায় উত্তেজনা ছড়ায়। ওই রাতে বিজেপির একদল উত্তেজিত সমর্থক ডুয়ার্সের রামঝোরা চা বাগান এলাকায় একজন তৃণমূল কর্মীর গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে শনিবার দফায় দফায় ডুয়ার্সে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। । বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক বলেন, “আমরা সে ভাবে রাস্তায় নামিনি। তাতেই বনধে সাড়া মিলেছে।”
এদিন সকাল থেকে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় হাতে গোনা বে সরকারি বাস নজরে এসেছে। শনিবার থাকায় বেশিরভাগ সরকারি অফিসই এদিন ছিল বন্ধ। বন্ধ ছিল অধিকাংশ স্কুলও। এদিন দুপুরে মাদারিহাট থানা এলাকার শিশুবাড়ি গ্রামে তৃণমূল সমর্থকরা তিন বিজেপি কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে দুটি বাইক ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। একজন বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটেছে। আরেকজনের হাত ভেঙেছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই বিজেপি সমর্থককে বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিজেপি-র আলিপুরদুয়ার জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোজ তিগ্গা বলেন, “যে ভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজ দখলে আনতে আমাদের উপর হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল তা মানুষ যে মেনে নেয় নি, বন্ধ সফল করে সেটাই দেখিয়ে দিলেন তাঁরা।”
কলেজ ভোট কে কেন্দ্র করে বিজেপি-র উপর হামলা চালিয়ে তাদের রাজনীতির আঙিনা মজবুত করার ক্ষেত্রটি তৃণমূল তৈরি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাম নেতারা। আলিপুরদুয়ার জেলার আরএসপি নেতা গোপাল প্রধানের কথায়, “বনধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ডুয়ার্সে। বিজেপি-র মাটি শক্ত করার পেছনে তৃণমূলই কার্যত মদত দিয়েছে। আমরা অবশ্য বনধ কে সমর্থন করছি না।”
তৃণমূলের জেলা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ১৬ টি কলেজের মধ্যে বীরপাড়া কলেজে এবিভিপি কেবল মাত্র মনোনয়ন তুলেছে সন্ত্রাসের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। বাকি কলেজে তারা প্রার্থী পায়নি। কলেজ নির্বাচনকে ঘিরে এর আগেও উত্তেজনা হয়েছে। তা বলে কোন দলের পক্ষে কোনদিন সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়নি। বিজেপি-র বনধের ফলে গোটা ডুয়ার্সের অর্থনীতি ও জনজীবনের উপর প্রভাব পড়েছে।”
এদিন সকাল ৮টা নাগাদ কিছুক্ষণের জন্য ইংরেজবাজারের রথবাড়িতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি সমর্থকরা। পরে বেলা ১টা নাগাদ সুকান্ত মোড়েও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়ে মিছিল করে বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেন। মালদহ শহরে মধ্যে রিকশা চলায় বিজেপির কর্মী সমর্থকরা কয়েকটি রিকশার চাকার হাওয়া খুলে দেন।
ইংরেজবাজার শহরের পাশাপাশি পুরাতন মালদহ,হবিবপুর,বামনগোলা,গাজল এলাকায় জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বন্ধকে ঘিরে কোনও গোলমাল হয়নি।