সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। বিমানবাবু জানান, বিষয়টি জানেন না, খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা এনসিসি-র সদস্যদের রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে জলপাইগুড়িতে। শুক্রবার দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতেই স্থানীয় একটি স্কুলের ১৮ ছাত্র এনসিসি-র ইউনিফর্মের উপরে লাল হাত কাটা জামা পরে সিপিএমের জেলা সম্মেলনে সূচনায় শহিদ বেদিতে স্যালুট দেন। সেই জামার পিছনে লেখা ছিল ‘রেড ফোর্স’। কয়েকটি ছাত্রের ইউনিফর্মের উপরে এনসিসি-র ব্যাজও ছিল। সকলেই দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন এনসিসি সদস্যদের কেন এই ভাবে সাজিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে নিয়ে যাওয়া হল তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জলপাইগুড়িতে। সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে নানা মহলে। আরডিসি ৬১ বেঙ্গল এনসিসি জলপাইগুড়ি দফতরের মুখপাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, “দেশের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন এনসিসি-র মাধ্যমে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়। কোনও রাজনৈতিক দলের মঞ্চে এনসিসি ক্যাডারদের ব্যবহার করা অপরাধ। স্কুলের এনসিসি-র ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে শো-কজ করা হবে। প্রমাণ পাওয়া গেলে, ওই স্কুলে এনসিসি-র অনুমোদন বাতিল করা হবে।” জলপাইগুড়ির অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “এটা সামরিক বাহিনীর অপমান। এনসিসি অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
সিপিএম সূত্রের খবর, ওই এনসিসি প্রশিক্ষিতি ছেলেদের স্থানীয় স্কুল ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউট থেকে আনা হয়। এনসিসি-র ছেলেরা জানায়, ‘স্যার’ তাঁদের অনুষ্ঠানে যেতে নির্দেশ দেন। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে অন্য শিক্ষকদের দাবি তাঁরা কিছু জানেন না।
কেন এনসিসি-র ছেলেদের দলীয় মঞ্চে ব্যবহার করা হল? বিমান বসু বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখব। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্তবাবুও ওই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। সিপিএমের জলপাইগুড়ি সদর জোনাল কমিটির সম্পাদক জিতেন দাস বলেন, “রুশ বিপ্লবের রেড ফোর্সের প্রতি সম্মান জানাতে এমন স্বেচ্ছাসেবক দলীয় সম্মেলনগুলিতে থাকে।”
সিপিএম সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই প্রথম কোনও দলীয় অনুষ্ঠানে জেলায় ‘রেড ফোর্স’-এ স্কুলের ছেলেদের আনা হয়। ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউটের এনসিসি-র গ্রুপ লিডার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অঙ্কিত সরকার ওই স্যালুট’ জানানোর অনুষ্ঠানে ছিলেন। তিনি বলেন, “স্কুলের গিরিন স্যার আমাদের শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ স্কুলের মাঠে এনসিসি-র পোশাক পরে আসতে বলেন। সে ভাবে ১৮ জন পৌঁছে যাই। এর পরে একজন এসে গিরিন স্যারের নাম করে আমাদের জেলা পরিষদের হল ঘরের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে রেড ফোর্স লেখা লাল জামা পরতে বললে প্রথমে অস্বীকার করি। কিন্তু বারবার বলায় ফেলতে পারিনি।”
কে ওই গিরিন স্যার? যার নির্দেশে স্কুলের এনসিসি-র ছেলেরা রাজনৈতিক দলের মঞ্চে চলে গেল?
গিরিন দত্ত ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউটের শিক্ষাকর্মী। তিনি সিপিএমের ৩ নম্বর লোকাল কমিটির নেতা। ছেলেদের কথা শুনে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়েন। তাঁর দাবি, “আমি কেন এনসিসি-র ছেলেদের দলীয় মঞ্চে যেতে বলব? ওরা ছেলেমানুষ তো, কী বলতে কী বলে ফেলেছে!” আরডিসি ৬১ বেঙ্গল এনসিসি জলপাইগুড়ি দফতরের কর্তারা জানান, সরকারি অনুষ্ঠানেও এনসিসি-র ছেলেদের যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হয়। ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউটের এনসিসি-র অ্যাসোসিয়েটেড অফিসার বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে তো কেউ বলেনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি বলেন, “কেমন করে ওই ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে তদন্ত হবে।”
এদিন এনসিসি-র পোশাক পরে যে ১৮ জন ছাত্র দলীয় সম্মেলনের শহিদ বেদিতে স্যালুট করে তাঁদের মধ্যে দু’জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, ১৪ জন দশম শ্রেণির এবং দু’জন নবম শ্রেণির পড়ুয়া। স্যালুট পর্ব শেষ হতে তাঁরা দ্রুত হল ঘরে ঢুকে পড়েন। ভয়ে নাম বলতে চাননি কেউ। তাঁদের একই বক্তব্য, “আমরা মনে করেছিলাম প্যারেড হবে। কোথায় কী!” এক ছাত্র জানায়, সভাস্থলে পৌঁছনোর পরে তাঁদের টুপি ও জামা থেকে এনসিসি লোগো খুলে ফেলতে বলেন কয়েকজন সিপিএম নেতা। কিন্তু, তিন জনের লোগো খোলা যায়নি। তার উপরে ওই ভাবে লাল জামা পরায় তা সকলের নজরে পড়ে যায়। তাতেই শুরু হয় হইচই।
ছবি: সন্দীপ পাল।