এখনও অধরা হুমায়ুন, ক্ষোভ কালিয়াচকে

কালিয়াচকে একের পর এক অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলার পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁরা বারুদের স্তূপের উপরে বাস করছেন। কাঠের গুদামের নীচে আস্ত একটি পাকা ঘর তৈরি করে তার মধ্যে দেশি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল অথচ পুলিশ তা টের পায়নি। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, যদি বিস্ফোরণ ঘটত, তা হলে অনেক লোকের প্রাণ যেতে পারত। তা ছাড়া, মালদহে দীর্ঘদিন ধরেই দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

কালিয়াচকে একের পর এক অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলার পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁরা বারুদের স্তূপের উপরে বাস করছেন। কাঠের গুদামের নীচে আস্ত একটি পাকা ঘর তৈরি করে তার মধ্যে দেশি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল অথচ পুলিশ তা টের পায়নি। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, যদি বিস্ফোরণ ঘটত, তা হলে অনেক লোকের প্রাণ যেতে পারত। তা ছাড়া, মালদহে দীর্ঘদিন ধরেই দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার চলছে। নানা ঘটনায় বারবার তার প্রমাণ মিলেছে। তারপরেও কেন পুলিশ ওই অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট খোঁজ খবর নেয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

রবিবার ভোরে কালিয়াচকের কড়ারি চাঁদপুরে একটি পরিত্যক্ত কাঠের গুদামের নীচে লুকোনো ঘর থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম-সহ বিহারের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার ২৪ ঘণ্টা পরেও অবশ্য ওই গুদামের মালিক হুমায়ুন শেখ-সহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাতেও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। সোমবার ধৃত মহম্মদ নজরুল শেখের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

গত কয়েক বছরে কালিয়াচকের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এমনই অস্ত্র কারখানার সন্ধান মিলেছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত বছর মার্চে কালিয়াচকের মোজমপুরের লক্ষ্মীপুরের একটি আমবাগান থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম মেলে। তার পরে ১৬ মাইল এলাকাতেই একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে এমনই এক অস্ত্র কারখানার সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। ফের রবিবার একটি অস্ত্র কারখানার খোঁজ মিলল।

Advertisement

ওই গুদামটির মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই কালিয়াচক থানা। প্রশ্ন উঠেছে, থানার এত কাছে এমন ভাবে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল, অথচ কেন পুলিশ টেরই পেল না? এলাকায় অভিযান চালালে আরও এমন বেআইনি অস্ত্র মিলতে পারে বলে অনুমান বাসিন্দাদের।

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আমাদের সারা বছরই অভিযান চলে। এখন বিভিন্ন এলাকায় আমরা আরও বেশি করে অভিযান চালাব।” ধৃতকে জেরা করে যা তথ্য মিলছে তার উপরে ভিত্তি করে আরও নির্দিষ্ট ভাবে অভিযান চালানো যাবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি জেরার মুখে জানিয়েছে, তার সঙ্গে আরও তিন জনকে বিহার থেকে আনা হয়েছিল। হুমায়ুন শেখই তাকে নিয়ে এসেছিল। সে ওয়ান শটারই কেবল তৈরি করতে পারত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুমায়ুন গ্রামে জ্বালানি বিক্রির পাশাপাশি গরু কেনা বেচার কাজ করত। তবে গোপনে সে যে অস্ত্রের কারবার করত, তা জেনে গ্রামবাসীরা হতবাক। বর্তমানে হুমায়ুন পলাতক। পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগেও ধৃত মহম্মদ নজরুল অস্ত্র তৈরির জন্য কালিয়াচকে এসেছিল। তখন তাকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারি বলেন, “পুলিশ আরও অভিযান চালালে এমন কারখানা আরও মিলবে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “মাথারা থেকে যাচ্ছে অধরা। যার জন্য তারা তাদের অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় বলেন, “মূল মাথারা গ্রেফতার না হলে ফের তারা অন্যত্র তাদের ডেরা বানিয়ে এমন অসামাজিক কারবার শুরু করবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “পুলিশ তাদের আইন অনুযায়ী কাজ করছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement