বিদ্যুৎ এল ছিটমহলের শাকাতি গ্রামে। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও বিদ্যুৎ পৌঁছতে সময় লাগল পাক্কা দশ বছর। বিএসএফের সাহায্য নিয়ে ভারতীয় ছিটমহল শাকাতিতে বিদ্যুৎ পৌঁছল বুধবার। দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ২০০৪ সালে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়। যদিও, কাটাতাঁরের বেড়ার ও পারে থাকা এই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছতে একের পর এক বাধা বিপত্তি আসতে শুরু করে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রে জানানো হয়। আর্ন্তজাতিক সীমান্তের ৫০ মিটারের মধ্যে কোনও রকম স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজ করা যাবে না বলে আপত্তি ওঠে। যদিও, বিএসএফের তরফে জানানো হয়, বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবা এই বিধিনিষেধের আওতায় আসে না। অবশেষে বুধবার সরকারি ভাবে বোতাম টিপে বিদ্যুৎ পরিষেবা শুরু হয়েছে শাকাতি গ্রামে।
বুধবারেও গ্রামে বিএসএফের কড়া নজরদারি ছিল। এ দিন বোতাম টিপে একটি আলো জ্বালিয়ে পরিষেবার প্রতীকী উদ্বোধন করেন বিএসএফের রাধাবাড়ি রেঞ্জের ডিআইজি অখিল দীক্ষিত। তিনি বলেন, “বহু দিন ধরে এই গ্রামে আলো জ্বালানোর চেষ্টা চলছিল। গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা শুরুর পরে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার সুবিধে হবে। কৃষকদের খেতের কাজে সুবিধা হবে।” তিনি রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের আধিকারিকের কাছে এলাকার সর্বত্র পথবাতি ও কাঁটাতারের গেটের পাশে ট্রান্সফর্মার বসাতে প্রস্তাব দেন।
হলদিবাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়া থেকে দুই কিলোমিটার ভিতরের ছিট শাকাতি গ্রাম। বেড়ার ভিতরে কিছুটা এগোলেই কুরুং নদী। বাঁশের সাঁকো পার হয়ে গ্রামে ঢুকতে হয়। সরু মাটির রাস্তা। বিএসএফকেও হাঁটা পথেই গ্রামে পৌঁছতে হয়। রাস্তার একপাশে বাংলাদেশের বক্সিপাড়া, অন্য দিকে মুন্সি পাড়া, নারায়ণ পাড়া। করুং নদীর মধ্যে ও গ্রামের চারপাশে স্তম্ভ লাগিয়ে সীমান্ত পৃথক করা হয়েছে। গ্রামে ২৪টি পরিবারের বসবাস। মোট বাসিন্দার সংখ্যা ১৬১। জমির পরিমান ১৬২ বিঘা। গ্রামের উৎপাদিত শাকসব্জি অবাধে বাংলাদেশের চাকলা হাটেও পৌঁছয় বলে জানা গিয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের আধিকারিক মোশারফ হোসেন বলেন, “বিএসএফের আধিকারিকের প্রস্তাব বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হবে।” রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া থেকে মোট ৪৬ খুঁটির মাধ্যমে ২ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটিতে বিদ্যুৎ পৌঁছোনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জনাব আলি, রেজ্জাক মণ্ডল বলেন, “বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হল।” এ দিন স্থানীয় মানুষ বিদ্যুৎ চালিত পাম্প সেট বসানোর ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন। জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাসন্তী রায় বলেন, “লিখিত প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনা করা হবে।”