রায়গঞ্জে সাংবাদিক সম্মেলনে দীপাদেবী।—নিজস্ব চিত্র।
রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মূল স্বপ্ন ছিল এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করা। কিন্তু পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ও বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ না করায় কেন্দ্রীয় সরকার হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। লোকসভা নির্বাচনে এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই সিপিএম ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একযোগে প্রচারে নামল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে সাংবাদিক বৈঠক করে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি এমনই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “প্রথমে বামফ্রন্ট ও পরে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ না করায় কেন্দ্রীয় সরকার এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি। সরকারের অসহযোগিতার জেরেই হাসপাতাল তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। আমরা তা বাসিন্দাদের জানাব। আগামী মাসে বিদায়ী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরে দুটি জনসভা করবেন। তিনি এই বিষয়গুলি প্রচার করবেন।”
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দে রায়গঞ্জে ১০০ একর জমিতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করে। তবে হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকারকে জমি দিতে হবে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পানিশালা এলাকায় হাসপাতাল তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা ১১০ একর জমি পরিদর্শন। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে দেয় বলে অভিযোগ তুলে দীপাদেবীর নেতৃত্বে আন্দোলনে নামে কংগ্রেস।
এ বারের ভোটে সিপিএমকেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করছেন দীপাদেবী। সেইসঙ্গে তৃণমূলকে যে তিনি বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ সেকথাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “তৃণমূল প্রার্থীকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে ওঁর সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হবে না।” উল্লেখ্য, রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে দীপাদেবীরই দেওর তথা প্রিয়বাবুর ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
সম্প্রতি, সত্যরঞ্জনবাবু জানান, দলের অনুমতি নিয়ে তিনি দাদা প্রিয়বাবুর ছবি নিয়ে ও প্রিয়বাবুর স্বপ্ন পূরণের কথা বলে নির্বাচনী প্রচার করবেন। এই বিষয়ে দীপাদেবীর কটাক্ষ, “তৃণমূল রাজ্যজুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে প্রচার করে ভোট করছে। তাহলে উত্তর দিনাজপুরে কেনও প্রিয়বাবুর ছবি দরকার পড়ছে? আসলে তৃণমূল প্রিয়বাবুর নাম ও পদবী ব্যবহার করে নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন দেখছে। এতে প্রিয়বাবুকেই অসম্মান করা হচ্ছে।” তিনি জানান, যে দলের সরকার জমি অধিগ্রহণ না করে প্রিয়বাবুর মূল স্বপ্ন এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে দিয়েছে, সেই দলের প্রার্থীর মুখে প্রিয়বাবুর স্বপ্ন পূরণ করার কথা মানায় না। এদিন সাংসদ তহবিলের টাকা তিনি কী কী কাজ করছেন তা জানিয়ে প্রচারে সেগুলিকে সামনে আনার কথাও দীপাদেবী ঘোষণা করেছেন।
দীপাদেবীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, “আমরা প্রিয়বাবুকে রাজনৈতিক পরিচয়ের উর্ধ্বে রেখে সম্মান করি। দীপাদেবী প্রিয়বাবুর উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ। তাই নানা কথা বলছেন।” একই কথা বলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাপি ভৌমিক।