কম সময়ে বেশি লাভের আশায় টাকা খুইয়েছেন বস্তিবাসীদের অনেকেই। সারদা সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁদের মাথায় হাত। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি তদন্তে কাজের কাজ কিছু না হওয়ায় সকলেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট সারদা-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের এ কে গোপালন কলোনির বাসিন্দারা ফের আশার আলো দেখছেন।
যেমন বিজয়া দাসের কথা ধরা যাক। হকার স্বামীর সামান্য রোজগার থেকে বিজয়া সারদায় ৩০ হাজার টাকা জমিয়ে ছিলেন। ফুটপাতে চা বিক্রি করেন মিঠু মোহান্ত। সারদায় জমানো ১২ হাজার টাকা ফেরত পাননি। সারদায় ২৫ হাজার টাকা এক বছরের জন্য আমানত করে এখন অথৈ জলে পড়েছেন মনিকা দেবী। তিনি বলেন, “সিবিআই তদন্ত করে দোষীদের সাজা দিক। আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।”
সারদা বিপর্যয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০০ কোটি টাকার ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করেছিলেন। হতদরিদ্র শতাধিক বস্তিবাসী টাকা ফেরতের আশায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন, যেমন দিনমজুর কানন দাস, বিপুল দাস, অনু দাস, দুলাল বিশ্বাসেরা সারদায় জমানো ৩ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ আমানতকারী টাকা না পেয়ে দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শহরের চৌরঙ্গি ঘোষপাড়ার দোকান কর্মী মানিক পালের অভিযোগ, শ্যামল সেন কমিটির কাছে নথি জমা দিয়েও সারদায় জমানো ৯ হাজার টাকা ফেরত পাননি। বালুরঘাটের শান্তি কলোনির বাসিন্দা পরিচারিকা অলোকা দাস বলেন, “সারদায় ১৫ মাসের মেয়াদে মাসে ২০০ টাকা করে রাখতাম। সাড়ে ১০ মাস জমিয়েছি। সেই টাকা পেলাম না।” পরিচারিকার কাজ করেন লক্ষ্মী দাসও। তিনি ১৫ হাজার টাকা স্থায়ী আমানত করান সারদায়। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী টাকা ফেরাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। শুনে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। বছর ঘুরতে চলল টাকা ফেরত পেলাম না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালাতে পারছি না।”
এজেন্টরা খুব সহজেই ওই সমস্ত গরিব বাসিন্দাদের ভাঙা ঘরে পৌঁছে বেশি লাভের লোভ দেখিয়ে দেদার টাকা লুঠে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। চোখের সামনে সারদার অফিস ও পরিচিত মুখ দেখে ভরসা করেছিলেন বালুরঘাটের ওই কলোনির বাসিন্দারা। কলোনি থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে যুবশ্রী মোড়ে সারদার প্রধান জেলা অফিস এখন ‘সিল’। বস্তিবাসীরা এখন খুঁজে বেড়ান এজেন্টদের। অনেকেই জানান, সমীর এজেন্ট, বাপি এজেন্ট, অরুণ এজেন্ট গা ঢাকা দিয়েছেন। এ দিন সিবিআই তদন্তের খবর পেয়ে কলোনির বাসিন্দারা মোড়ে জটলা শুরু করেন। সিবিআই সব এজেন্টদের খুঁজে বার করে টাকার হদিস করতে পারবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন। যেমন কাকলি দাস বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা টিভিতে শুনেছি। দেখা যাক, কত দিনে সিবিআই তদন্ত শেষ করে।”