ভোটের ফল ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক অশান্তি অব্যাহত রইল উত্তরবঙ্গে। মালদহে এক তৃণমূল নেতার উপরে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ ওঠে। কোচবিহারে আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি ও সিপিএম।
তৃণমূল কংগ্রেসের সুজাপুরের অঞ্চল সভাপতি সহরুল বিশ্বাসের উপর হামলা ও পাল্টা হামলাকারীর উপরগুলি চালানোর অভিযোগে উত্তেজনা ছড়াল সুজাপুরে। শনিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ইংরেজবাজার থানার মালদহ শহর লাগায়ো একটি হোটেলের ভিতরে এই ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারী হাঁসুয়া গিয়ে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির মাথায় কুপিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে মালদহ শহরেরে একটি বেসরকারি নাসিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যদিকে, জখম অবস্থায় হামলাকারীকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধেও। গুলিবিদ্ধ রাজেশ শেখকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। জখম অঞ্চল সভাপতিকে দেখতে নাসিংহোমে গিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “আমাদের অঞ্চল সভাপতি তিন বন্ধুকে নিয়ে যখন হোটেলে খাচ্ছিলেন। তখন রাজেশ শেখ নামে এক দুষ্কৃতী তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছে।”
জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “অভিযোগ অনুযাযী পুলিশ তদন্ত করছে।” পুলিশ জানিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতির উপর হামলাকারী রাজেশ শেখ তৃণমূল কংগ্রেসেরই সুজাপুরেরে জেলাপরিষদের প্রার্থী রুকু শেখের ভাইপো। তৃণমূলের সুজাপুরের অঞ্চল সভাপতি সহরুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একাধিক খুন, সর্ংঘষের মামলা রয়েছে। ভোটের কয়েকদিন আগে কালিয়াচক কলেজে ছাত্রসংসদ নিবার্চনে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগে জেল খেটে বেরিয়ে এসেছেন তিনি।
জেলা পুলিশ ও হোটেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ সহরুল তিন বন্ধুকে নিয়ে মালদহ শহর লাগোয়া একটি হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন। ওই হোটেলে সপরিবারে খেতে গিয়েছিলেন রাজেশ শেখ। হোটেলকর্মীরা জানিয়েছেন সহরুল বিশ্বাস হোটেলের পানশালায় যখন তিন বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছিলেন, তখন বাইরের লনে সপরিবারে ছিলেন রাজেশ শেখ। সে সময় একবার একাই রাজেশ শেখ পানশালায় ভিতরে ঢুকে সহরুলকে ডেকে এনে পরিবারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। এর কিছুক্ষন পরই লনে থেকে পানশালার ভিতরে ঢুকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে রাজেশ শেখ সহরুলের মাথায় কোপ বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সহরুল রক্তাক্ত হয়ে পড়লে রাজেশ দৌড়ে পানশালা থেকে বেরিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। হোটেলকর্মী জানিয়েছেন, এরপরই রক্তাক্ত অবস্থায় সহরুল বিশ্বাসও রাজেশের পিছু নিয়ে বাইরে বাইরে আসে। এরপর নিজের গাড়ি থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে রাজেশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে বলে অভিযোগ। রাজেশ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় নিজেই গাড়ি চালিয়ে সহরুল বিশ্বাস হোটেলের পাশে একটি নার্সিংহোমে গিয়ে ভর্তি হন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, তারপরেই তিনি জ্ঞান হারান ফেলেন।
সহরুল বিশ্বাসের উপর হামলার খবর পেয়ে সুজাপুর থেকে তৃণমূল কর্মীরা মালদহে চলে আসেন। হোটেল গিয়ে দেখা যায় পানশালার মেঝে রক্তাক্ত হয়ে রয়েছে।
কোচবিহারে বিজেপি-র অভিযোগ, ডাউয়াগুড়িতে তাদের দলীয় কার্যালয়ে, দলুয়ায় তিন সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে মারধর ও ভাঙচুর করেছে শাসকদলের লোকেরা। কাটামারিতে ধর্ম পাটোয়ারি নামে এক বিজেপি কর্মীর দোকানে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মোয়ামারির দোমুখা বাজার এলাকায় দলের এক সমর্থকের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে বিজেপি-র দাবি। পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “গোলমালের খবর এলেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শনিবার মাথাভাঙার ফুলবাড়িতে রঞ্জিত বর্মন নামে এক সিপিএম সমর্থককে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। ফুলবাড়ি ও হাজরাহাটে দলের অফিসে ভাঙচুর, মাথভাঙা শহরে সিটুর অফিস দখল করা হয় বলে বামেদের অভিযোগ। একই অভিযোগ করেছে ফরওয়ার্ড ব্লকও। এ দিন দিনহাটার শালমারায় তৃণমূল সমর্থকরা একটি ফব-র কার্যালয় দখল করে। পেটলা অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে দিনহাটার মাতালহাট ও গীতালদহে ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে ভাঙচুর, বুড়িরহাটে দিনহাটা ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক সভাপতি বীরেন রায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহর অভিযোগ, “পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছোনোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তৃণমূল অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চায়নি। দলের জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ভোটে হেরে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বাম ও বিজেপি নেতারা। সবটাই তৃণমূলকে হেয় করার ষড়যন্ত্র।”