মহম্মদ তাহিরুদ্দিন।
পড়শির বাড়ি থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে। রবিবার রাত প্রায় সাড়ে তিনটা নাগাদ গোয়ালপোখর থানার ধরমপুরের চিড়াকুটি এলাকাতে ঘটনার পরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম মহম্মদ তাহিরুদ্দিন (৩০)। বাড়ি ওই এলাকাতেই। তৃণমূল বিরোধী তাজিরুদ্দিন জব কার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাঁকে চক্রান্ত করে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সিপিএম। দাবি অস্বীকার করেছে তৃণমূল। খুনের প্রতিবাদে এ দিন মজলিশপুর এলাকাতে বিহার বাংলা গ্রামীণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়।
দুপুরে রায়গঞ্জে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল দাবি করেন, ‘‘নিহত যুবক সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তৃণমূলের সন্ত্রাস ও তৃণমূলের স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের আর্থিক দুর্নীতির প্রতিবাদে দলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেই আক্রোশেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে অপহরণ করে খুন করেছে। দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে দলের তরফে জেলা জুড়ে আন্দোলনে নামা হবে।’’
নিহতের পরিবারের লোকেরা জানান, গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় বাড়ি থেকে গ্রামের হাটে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন তাহিরুদ্দিন। তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে রয়েছেন। তবে রাতে আর বাড়ি না ফেরায় তাঁর খোঁজ শুরু হয়। রবিবার গোয়ালপোখর থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ দিন রাতেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁর বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের বাসিন্দা পেশায় ভিন রাজ্যের শ্রমিক মহম্মদ ফকির নামে এক যুবককে আটক করে। জেরায় পুলিশ খুনের বিষয়টি জানতে পেরে দেহটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, তাহিরুদ্দিন তাঁর স্ত্রীকে উত্যক্ত করত। এ দিন তাঁর বাড়িতে আসতেই তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়। মহম্মদ ফকিরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই যুবক বাড়ির ঘরের ভিতরে গর্ত করে মৃত দেহটি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার তাঁকে ইসলামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। তবে মহম্মদ ফকির বলে, ‘‘আমার স্ত্রীকে খুবই উত্ত্যক্ত করত। সেই রাগ সহ্য করতে না পেরেই এদিন বেশ কিছু কোপ দিয়েছি। এত অত্যাচার করলে কোনও স্বামী সহ্য করবে না।’’
ইসলামপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিকিতা ফনিং বলেন, নিখোঁজ থাকার পর এক বাড়ি থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারা গিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ওই যুবকের স্ত্রীকে উত্যক্ত করায় তাকে খুন করেছে। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। তদন্তের রিপোর্ট পেলেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
তবে নিহতের পরিবারের দাবি, এলাকাতে জব কার্ড নিয়ে দুর্নীতি চলছে। জোটের পক্ষ থেকেই সেই আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কংগ্রেস সমর্থক তাহিরুদ্দিন। তবে তাকে সেই কারণেই খুন করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, গত ১৬ নভেম্বর জব কার্ডের কাজ হচ্ছিল। এলাকার পঞ্চায়েত কর্মীকে দিয়ে সেই কাজ করানো হচ্ছিল। তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মহম্মদ তাসলিমুদ্দিন। তারই প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গেই বচসা বাঁধে। তাহিরুদ্দিনের শ্যালক সাহাদ আলি বলেন, ‘‘জামাই বাবু রং-এর ঠিকাদার ছিলেন। এলাকার দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। তাঁর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দাঁড়ানোর কথা ছিল। সেই দিন বাজার করতে গিয়ে আর ফেরেননি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘জামাইবাবুর সঙ্গে তার দুই দিন আগেই এলাকার এক পঞ্চায়েত সদস্যের বচসা বেঁধেছিল। তবে পুলিশ এ দিন রাতের অন্ধকারে কাউকে না জানিয়েই পাশের বাড়ি থেকে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে আমাদের জানায়।’’ বিষয়টি নিয়ে এলাকার সিপিএম নেতা মঞ্জর আলম বলেন, ‘‘এলাকাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোটের পক্ষেই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি।’’
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পঞ্চায়েত সদস্য তাসলিমুদ্দিনের দাবি, ‘‘পুরো বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসাচ্ছে। ওটা তো মহিলা ঘটিত কারণেই তাঁর মহিলার স্বামীই তাঁকে খুন করেছে।’’ অপর দিকে গোয়ালপোখরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানির ভাই গোলাম রসুল বলেন, ‘‘ওই বিষয়টি নিয়ে অযথা মিথ্যা রাজনীতি করছে, জোটের সদস্যরা। যে খুন করেছে, সে তো নিজেই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তবে এখানে তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’’