মালদহের গৃহবধূ। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গে কোচবিহার, শিলিগুড়ির পর টিকা নেওয়ার পর শরীরে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হওয়ার দাবি করলেন মালদহের এক গৃহবধূ। দিন কয়েক আগে করোনার টিকা নেওয়ার পর তাঁর শরীরে স্টিলের বিভিন্ন জিনিস আটকে ধরছে বলে দাবি করেছেন মালদহের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলবাড়ি স্কুলপাড়া এলাকার ওই বাসিন্দা। যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। করোনা টিকা কোনও ভাবেই শরীরে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করতে পারে না।
মালদহের স্কুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা, সাধন মণ্ডল পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী চন্দনা মণ্ডল দিন কয়েক আগে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নিয়েছিলেন করোনার টিকা। গত কয়েক দিনে সংবাদমাধ্যমে গায়ে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হওয়ার খবর দেখেন তাঁরা। এর পর সাধন নিজের গায়ে বিভিন্ন সামগ্রী আটকাচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করেন। কিন্তু, তাঁর গায়ে কিছুই আটকায়নি। তবে তাঁর স্ত্রীর গায়ে বিভিন্ন ধাতব বস্তু আটকে যাচ্ছিল। সোমবার এই খবর জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় ওই এলাকায়।
কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ঘটা এই সব ঘটনার কি আদৌ কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে? আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, কোভিডের টিকা নিয়ে কোনও ব্যক্তির শরীরেই চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। একই কথা জানাচ্ছে, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)। পিআইবি এ নিয়ে একটি টুইটে লিখেছে, ‘টিকা নিয়ে শরীরে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরির যে দাবি নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
একই মত চিকিৎসক এবং বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীদেরও। মালদহ ব্লকের প্রাক্তন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক শৌভিক দাস বলেছেন, ‘‘কেন এমন হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা এখনই দেওয়া যাবে না। কিন্তু টিকার জন্য এ রকম হতে পারে না।’’ মালদহ জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক সুনীল দাসও সেই কথাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এটি একটি গুজব। কারণ, অনেক মানুষের ক্ষেত্রে এ ভাবে ধাতব বস্তু আকর্ষিত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে টিকার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ এ ধরনের ঘটনা মানুষের মধ্যে টিকা নিতে অনীহা তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এই বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। এই গুজবের জেরে সাধারণ মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।’’