পুলিশকে দুষে আত্মঘাতী

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে এক বধূর আত্মহত্যায় নাম জড়াল পুলিশের। জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় শনিবার রাতের ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই বধূর দুই আত্মীয়কে আটক করেছে পুলিশ৷ কিন্তু মৃত্যুর আগে লেখা বধূর সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাঠগড়ায় খোদ পুলিশও৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে এক বধূর আত্মহত্যায় নাম জড়াল পুলিশের। জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় শনিবার রাতের ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই বধূর দুই আত্মীয়কে আটক করেছে পুলিশ৷ কিন্তু মৃত্যুর আগে লেখা বধূর সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাঠগড়ায় খোদ পুলিশও৷

Advertisement

পুলিশ সূত্রেই খবর, ওই সুইসাইড নোটে সরিতা চাচান নামে মৃত মহিলা (৫২) স্পষ্ট লিখেছেন, পুলিশ কোনও উপকারই তাঁদের করেনি৷ যদিও এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও রাজনৈতিক দলের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি৷ তবে সেটা কোন দল তা স্পষ্ট নয়৷ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরিতাদেবীর বাড়ি বেলাকোবা বাজার সংলগ্ন এলাকায়। বাড়ির কাছে রয়েছে সরিতাদেবীর স্বামী সরওয়ান চাচানের ওষুধের দোকান৷ তাঁদের বাড়িটি নিয়েই চলছিল পারিবারিক বিবাদ।

পুলিশ ও ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সরওয়ানরা তিন ভাই৷ আশির দশকে তাঁদের বাবা সরওয়ান ও তাঁর এক ভাই কৌশলকে নিজের বাড়ির জমি ভাগ করে দেন৷ তাঁদের আরেক ভাই অরবিন্দকে শিলিগুড়িতে বাড়ি করে দেন৷ সরওয়ানের অভিযোগ, এ বছর জানুয়ারি মাসে কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে বেলাকোবায় তাঁর বাড়ির একটা অংশ দখল করে অরবিন্দ৷ পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি৷ বরং বাড়ি থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করতে সরিতাদেবীর ওপর তারা নিয়মিত মানসিক অত্যাচার চালাত বলেও অভিযোগ৷ অভিযোগ, তার জেরে শনিবার রাতে নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই সরিতাদেবী৷

Advertisement

এই গোটা ঘটনায় সরিতা পুলিশকে দায়ী করে গিয়েছেন। রাজগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে কয়েক জন আত্মীয়কে মৃত্যুর জন্য দায়ী করার পাশাপাশি পুলিশ, পঞ্চায়েত ও রাজনৈতিক দলের দ্বারস্থ হয়েও যে লাভ হয়নি, তা উল্লেখ করেছেন তিনি৷

তাঁর স্বামীর কথায়, ‘‘বাড়ি দখল হয়ে যাওয়ার পর শেষ ছ’মাসে রাজগঞ্জ থানায় অন্তত ন’বার অভিযোগ দায়ের করেছি৷ কিন্তু এক বারের জন্যও পুলিশ আমাদের অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা করেনি৷’’ বেলাকোবায় নিজের বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে সরওয়ান এ দিন শুধু একটা কথাই বলছিলেন, ‘‘পুলিশ যদি একটু সক্রিয় হতো, তা হলে হয়তো আজ এই দিনটা আমায় দেখতে হতো না৷

শাসকদলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জয়নাল চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “প্রথম থেকে পুলিশই বলছিল নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে৷”

যদিও জেলার পুলিশ কর্তারা সরিতাদেবীর পরিবারের এই দাবি মানতে চায়নি৷ এমনকী সরিতাদেবী যে সুইসাইড নোটে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন তাও তাঁরা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “সুইসাইড নোটে সরিতাদেবী পুলিশ-প্রশাসনকে দায়ী করে কিছু লেখেননি৷ বরং কয়েক জন আত্মীয়কে দায়ী করেছেন৷” পুলিশ সুপার আরও দাবি করেন, “সরিতাদেবীর বাড়ির লোকেরা থানায় যত বারই অভিযোগ করেছেন তত বারই অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে৷”

রাজগঞ্জ থানার পুলিশ কর্তারা আবার বলছেন, সরিতাদেবী সুইসাইড নোটে পুলিশকেও দায়ী করলেও বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে৷ আদালত যেমন নির্দেশ দিয়েছে তেমনটাই হচ্ছে৷ যদিও সরিতাদেবীর পরিবার সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে তিনি লিখে গিয়েছেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর অভিযুক্তদের যেন শাস্তি দেওয়া হয়৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement