সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দল যে পিছিয়ে রয়েছে তা মেনে নিচ্ছেন নেতারাও। — ফাইল চিত্র।
সদস্য সংগ্রহে বিজেপিতে যেন ভাটার টান। কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এ বারে ‘পুরস্কারের টোপ’ দিল বিজেপি। কোনও কর্মী যদি একা পাঁচশোর বেশি সদস্য সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে তাঁকে জেলার পদ দেওয়া হবে বলে জানাল বিজেপি নেতৃত্ব। গত শনিবার জলপাইগুড়িতে বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের বাসভবনে সদস্য সংগ্রহ নিয়ে বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এমন পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এমন ঘোষণা শুনে বিজেপিরই প্রবীণ নেতাদের অনেকেই হতবাক! তাঁদের যুক্তি, সাধারণত বেশি ভোট পেলে সেই নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়। এখন সদস্যও সংগ্রহও করাও কী এত কঠিন হয়ে পড়েছে, প্রশ্ন ওই নেতাদের। যদিও দলের জেলা নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, সদস্য সংগ্রহ হল কোনও কর্মীর সাংগঠনিক দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। কোনও কর্মী একাই নিজের এলাকায় পাঁচশো সদস্য করতে পারলে বুঝতে হবে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা রয়েছে। সেই বিচারেই তাঁকে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দল যে পিছিয়ে রয়েছে তা মেনে নিচ্ছেন নেতারাও। বৃহস্পতিবার দলের জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় ওদলাবাড়ি-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সদস্য সংগ্রহ করেছেন। জয়ন্ত বলেন, “সদস্য সংগ্রহ চলছে। তবে পুজো শেষ হল, ধান কাটা চলছে। কর্মীদের অনেকেই ব্যস্ত। আরও একটু উৎসাহে কাজ করতে হবে।” উৎসাহ জোগাতেই পুরস্কারের টোপ দিচ্ছে দল দল। যদিও এই প্রতিযোগিতা বা সুযোগ কেবলমাত্র সাধারণ কার্যকর্তা তথা কর্মীদের জন্য। কোনও জেলা নেতা বা পদাধিকারীকে এই সুযোগ দেওয়া হবে না বলে দাবি। কেন এমন ঘোষণা করতে হল তার ব্যাখ্যায় দলের অন্দরের একটি মহলে কানাঘুষো চলছে, এ বারে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি?
রাজ্য নেতৃত্ব জলপাইগুড়ি থেকে চলতি বছরে ১ লক্ষ ৩০ হাজারের কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছে। বিজেপির সদস্য সংখ্যা তার অর্ধেকও হয়নি। যে নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকে দলের নির্দেশ মতো কাজ করছে না বলেও অভিযোগ। শুধু জলপাইগুড়িতে নয়, উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্য জুড়েই এমন অবস্থা দলের সদস্য সংগ্রহের। পুরস্কারের টোপ দেওয়ার অভিনব পরিকল্পনা রাজ্য থেকেই এসেছে বলে দাবি।
দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বলেন, “পুরস্কারের টোপ কথাটি বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন। কে কত জন সদস্য সংগ্রহ করল তাঁর মাধ্যমে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং জনসংযোগের ক্ষমতা যাচাই হয়ে যায়। সাংগঠনিক কুশতলা অনুযায়ী দলের বিন্যাসে কে কোন দায়িত্ব পাবে তার মূল্যায়ণ হয়।” জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপের কটাক্ষ, “বিজেপি নেতারা সদস্য খুঁজে পাচ্ছেন না। এর পরে যে ওদের আরও কী কী প্রলোভন দিতে হবে কে জানে!”