দিনহাটার বামনহাটের একটি কালীমন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পথে জনসংযোগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে, একশো দিনের কাজ। অন্য দিকে, বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে, তৃণমূলের জনসংযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে মূলত এই দুই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে দিনহাটার সাহেবগঞ্জ ও সিতাইয়ের জনসভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘২০১৯ সালে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আপনারা ভোট দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ‘অচ্ছে দিন’ আসবে। এখানকার সাংসদ বিজেপির। তিনি কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন। সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও। কোচবিহারে একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স গত ৯ বছরে করেছেন? নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজনীতির বাইরে গিয়ে কোচবিহারের মানুষের জন্য একটি প্রশাসনিক বৈঠকও কি করেছে?’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পরে এক প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। মানুষের দুয়ারে পরিষেবা নিয়ে গিয়েছেন।’’
দিনহাটার বামনহাটে এ দিন সকালেই অভিষেকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিএসফের গুলিতে নিহত প্রেমকুমার বর্মণ ও মোফাজ্জল হোসেনের পরিজনেরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। জনসভায় সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের মেরেছে বিএসএফ। যে বিএসএফ বিজেপির অধীনে রয়েছে। যার মাথায় রয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক। যাঁকে আপনারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাঁদের যোগ্য জবাব আগামী দিনে দেবেন, কি দেবেন না?’’ শীতলখুচিতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালে ১০ এপ্রিল ভোট চলাকালীন কী হয়েছিল, আপনারা দেখেছিলেন। চার জন নিরীহ মানুষকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা উপর মহলের নির্দেশ ছিল বলে গুলি করে মেরেছিল। এদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে।’’
বিজেপি অবশ্য অভিষেকের বক্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্ৰতিমন্ত্ৰী নিশীথ বলেন, ‘‘ওঁর (অভিষেক) চোখে ছানি পড়েছে। সে জন্য কোনও কাজ দেখতে পাচ্ছেন না। নিউ কোচবিহারে আমরা কত বড় স্পোর্টস কমপ্লেক্স করছি তা এক বার এসে দেখে যান।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘একের পরে এক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জনবিচ্ছিন্ন তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই প্রচুর অভিযোগ। মানুষ তাঁদের দেখলেই চোর চোর চিৎকার করছে। তাই ওঁদের কথার গুরুত্ব নেই।’’
পঞ্চায়েত ভোট নজরে রেখে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে এ দিন বারবারই অভিষেকের বক্তব্যে ফেরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা। নরেন্দ্র মোদীর একের পরে এক প্রতিশ্রুতি এবং গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে প্রচারে বিভ্রান্ত হয়েই মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে এমন কেউ থাকবেন না, যাঁর মাথায় ছাদ থাকবে না। বাংলা থেকে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের নাম কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে হেরেছে বলে ওরা জোর করে বাংলার টাকা আটকে রেখেছে। আটকে রেখেছে ২০ লক্ষ পরিবারের একশো দিনের কাজের টাকাও।’’ বকেয়া টাকা নয়াদিল্লির কাছ থেকে নিয়ে আসতে রাজ্যের তরফে এক কোটি মানুষের চিঠি নিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যাবেন বলে ফের ঘোষণা করেন অভিষেক। একই সঙ্গে আর্জি জানান, ‘‘পঞ্চায়েতে যখন ভোট দেবেন, এলাকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ভোট দিন। এলাকার সুখ-শান্তির কথা মাথায় রেখেভোট দিন।’’