প্রতীকী ছবি।
বামেদের পাঁচ, তৃণমূলের প্রায় ৭ বছর।
প্রায় ১২ বছর কেটে গেলেও বালুরঘাটের ২৫টি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ফের দোরগোড়ায় পুরভোট। তার আগে শহরে পানীয় জল প্রকল্প নিয়ে সরব বিরোধী বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস। নিঃশুল্কে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ ও সরবরাহের উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে বলে পাল্টা প্রচারে নেমেছে তৃণমূল।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ কর্মসূচিতে ২০০৮ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভা বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ প্রকল্পে ৪২ কোটি টাকা পায়। সেই সময় বালুরঘাট শহরের ২৫টি ওয়ার্ডকে চারটি জোনে ভাগ করে প্রথম দফায় কয়েকটি ওয়ার্ডে রাস্তার পাশে মাটির নীচে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়। শহরের মঙ্গলপুরে জলশোধনে ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানোর কাজও শুরু করে পুরসভা। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, ওই বোর্ডের পাঁচ বছরেও বাসিন্দারা কেউ জল পাননি।
২০১৩ সালের পুরভোটের আগে ওই জল সরবরাহ প্রকল্প রূপায়ণে বিদায়ী বামবোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে প্রচার করে তৃণমূল। ২০১৩ সালের ভোটে বামেরা পরাজিত হয়। বালুরঘাট পুরসভা দখল করে তৃণমূল শহরের কংগ্রেসপাড়ার ঘাটে আত্রেয়ী নদীতে ‘ইনটেক পয়েন্ট’ বসানোর কাজ করে। নদী থেকে জল তুলে মঙ্গলপুরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পৌঁছনোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৮ সালে তৃণমূল পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নালিশ, গত ১২ বছরে আত্রেয়ী নদীর জল শুকিয়ে কাংগ্রেসঘাটে চর উঠেছে। জল সরবরাহের প্রকল্পের খরচ ৪২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
বিজেপির টাউন সভাপতি সুমন বর্মণের অভিযোগ, ‘‘এক যুগ ধরে ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ চলছে। এখনও শহরের সব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পাননি। পুরভোটের মুখে বিনামূল্যে জল দেওয়ার কথা বলে শাসকদল বাসিন্দাদের মন পেতে চাইছে।’’
বামনেত্রী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সুচেতা বিশ্বাসের দাবি, ‘‘শহরে কিছু পাইপলাইন বসিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির মধ্যেই পুরভোট চলে আসে। গত পুরভোটের সময় শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের সব বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাসকদল বোর্ডের ক্ষমতায় এসেছিল। গত পাঁচ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।’’ আসন্ন পুরভোটে তাঁরা এই বিষয়টি শহরবাসীর কাছে তুলে ধরবেন বলে সুচেতা জানান।
জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর অভিযোগ, ভোটের মুখে কয়েকটি ওয়ার্ডে সামান্য কয়েকটি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কবে সকলের বাড়িতে জল পৌঁছবে, তা স্পষ্ট নয়।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের কয়েকটি এলাকায় অনেক বাড়িতে জল পৌঁছে গিয়েছে। পুরপ্রশাসক অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘বাড়িতে জল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিরোধিরা ওই কাজ করেনি বলেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এমন অভিযোগ করছেন।’’ তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই পানীয় জলের পাইপলাইন সংযোগের জন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে নেওয়া ৫ হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। নতুন আবেদনের ভিত্তিতে বিনামূল্যে বাড়িতে জল সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।