Youths

ডাকুন ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’দের 

এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী এই কোভিড আবহে যেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন কোচবিহারে। কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। কারও নিজের ছোট্ট ব্যবসা রয়েছে। কেউ আবার সরকারি দফতরে কাজ করেন। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪৪
Share:

ছবি সংগৃৃহীত।

তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। গাছের ছায়ায় সার বেঁধে বসে আছে শিশুরা। কেউ তিন চাকার সাইকেলে, কেউ ছোট্ট বেঞ্চে। কেউ আবার মাটিতেই। দূরে ধূ ধূ মাঠে কাশফুল ফুটেছে। সে দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শিশুদের কয়েকজন।

Advertisement

ওদের কেউ শুনতে পায় না, কারও চোখে আলো নেই। কেউ আবার বুঝতে পারে না কিছু। তবু আগমনির বার্তা তাদেরও স্পর্শ করে যাচ্ছে হাওয়ায় হাওয়ায়। মিটমিট করে হাসছে ওরা। চোখের রেখায় সেই হাসি ফুটে উঠেছে। তার পর সেই মুহূর্ত এল। একে একে সবার হাতে তুলে দেওয়া হল নতুন জামা। তা হাতে নিয়ে কেউ শুঁকে দেখছে। কেউ জড়িয়ে ধরেছে শরীরে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণের মুখে তখন তৃপ্তির হাসি। সেই তো ওঁদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

এমনই আর রূপকথা দেখ যায় কোভিড আক্রান্তদের ঘরে ঘরে। সেখানে নিয়মিত খোঁজ রাখছেন আর এক তরুণ। জানতে চাইছেন, কারও কী কোনও অসুবিধে হচ্ছে? ঘরে খাবার আছে? জল? বাজার করতে হবে? একবার তলব হলেই হাজির হয়ে যান তিনি। তাঁর হাতে যদি থাকে খাদ্য, তা হলে তৃতীয় আর এক তরুণের হাতে থাকে ওষুধের ভার। সামর্থ্য নেই, এমন মানুষদের জন্য।

Advertisement

শুধু ওই তিন জন নয়, এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী এই কোভিড আবহে যেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন কোচবিহারে। কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। কারও নিজের ছোট্ট ব্যবসা রয়েছে। কেউ আবার সরকারি দফতরে কাজ করেন। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। ওঁদের কথায়, “সকাল থেকে কত মানুষ তাঁদের কত অসুবিধের কথা জানান। আমরা যে আয় করি তা নিয়ে সবার পাশে থাকা অসম্ভব। তাই অন্যের সাহায্য নেই। ওঁদের কথা শুনলে অনেক মানুষ এগিয়ে আসেন। এখানেই আমাদের জয়।”

এই তো কয়েক দিন আগে, রাত দুটোর সময় ‘এ নেগেটিভ’ রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল এক পরিবার। এক ঘণ্টার মধ্যে রক্তদাতা জোগাড় করে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ান শহরেরই কয়েকজন তরুণ। আবার চাকির মোড়ের এক শিশুর টেস্টিস অপারেশন। প্রয়োজন ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার। বাবা-মায়ের ওই টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য নেই। চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রপচার করতে হবে। সেই সময়ও পাশে ওই তরুণরা।

কোনও এক বা দু’জনের নাম নয়, শহরের মানুষ ওঁদের একসঙ্গে বলছেন ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। ওঁরা হাসছেন। কাজ সেরে, হাত নেড়ে চলে আসার আগে বলছেন, ‘‘শুধু মনে রাখবেন, আমরা আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement