বাগানে কাজ। নিজস্ব চিত্র
টানা লকডাউনের ধাক্কায় চা শিল্প নিয়ে একদিকে যেমন চিন্তার কারণ রয়েছে, তেমনিই রয়েছে আশার কথাও। চা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, এই সময়ে দেশের বাজারে চা পানের পরিমাণ কমেছে। যা নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। তবে দীর্ঘ দিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেড়েছে চায়ের দামও, যে কারণে কিছুটা আশার আলো দেখছেন উৎপাদকরা।
চা বিক্রেতা সংস্থাগুলোর দাবি, লকডাউনের সময়ে দেশে চা পানের প্রবণতা ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। লকডাউনে রাস্তার ধারের চায়ের দোকান, ক্যাফে, অফিস-কারখানা সর্বত্র চায়ের স্টল বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এই ঘটনা যদি চায়ের ক্ষেত্রে আশঙ্কা তৈরি করে, তবে একই সঙ্গে সুখবর এনেছে বাজারে চায়ের দাম। লকডাউনের একটা বড় সময়ে চা উৎপাদন বন্ধ থাকায় বাজারে চা পাতার জোগান কমেছে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে জোগান কমতেই বেড়েছে চায়ের দাম। ২ মে থেকে শিলিগুড়ি এবং কলকাতার নিলাম কেন্দ্রে চায়ের দাম তরতর করে বেড়েছে। দামে গত বছরকে পিছনে ফেলেছে এই বছর। এই পরিস্থিতিতে আপাতত দু’টি বিষয়ে নজর রাখছে টি বোর্ড। প্রথমত লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে চা পানের মাত্রা কত বাড়ে. দ্বিতীয়ত, এখন যে বেশি দাম মিলছে তা কতদিন স্থায়ী হয়।
বছরভর দেশে চা পানের পরিমানের ওপর নজর রাখে চা বিক্রির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলির ফেডারেশন। মে মাসের শেষে ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, গত দু’মাসে যে রাজ্যগুলিতে চা পানের পরিমান ব্যাপক ভাবে কমেছে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র রয়েছে। ফেডারেশনের দাবি প্রতি মাসে দেশের চা পানের জন্য ৯ কোটি কেজি চা পাতা প্রয়োজন। বাড়িতে বসে কত পরিমাণ চা খাওয়া হল এবং দোকানে, অফিসে, কারখানায় চা পানের মাত্রা কত, সব মিলিয়েই এই হিসেব। তাদের দাবি, গত এপ্রিল এবং মে মাসে চা পানের পরিমাণ কমেছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি কেজি।
চা বিক্রেতাদের দাবি, যে বিপুল পরিমাণ চা পাতা গত দু’মাসে প্রয়োজন হয়নি, তা বাজারে মজুত রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ চা পাতার দাম ঘরে ফেরেনি। এর ফলে বাজারে প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গের অন্যতম চা বিক্রেতা সংস্থার রবি অগ্রবাল। তিনি ফেডারেশনের আমন্ত্রিত সদস্যও। তাঁর কথায়, “বাজার স্বাভাবিক হলে চা পান কতটা বাড়ে তার ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে।” এ দিকে শিলিগুড়ি এবং কলকাতার নিলামে মোটামুটি মানের চায়ের দর গত মে মাসে কেজি প্রতি ২০০ টাকা ছুয়েছিল। যা গড় দামের থেকে প্রায় সত্তর টাকা বেশি। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের মুখপত্র বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, “এই দাম ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ।”