প্রতীকী ছবি।
কথায় আছে, দশচক্রে ভগবানও ভূত হন। আর লকডাউনের দুর্ভোগচক্রে স্মার্টফোন দিব্যি ‘খলনায়ক’ থেকে ‘নায়ক’ বনে গিয়েছে। এতদিন স্কুল থেকে অভিভাবকদের পইপই করে বলা হতো, স্মার্টফোন ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পয়লা নম্বর শত্রু। লকডাউনের গেরোয়া এখন স্কুলই অভিভাবকদের অনুরোধ করছে নিজের স্মার্টফোন ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দিতে, ক্লাস হবে অনলাইনে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “চরম বিপদ এলে অনেকসময় শত্রুই রক্ষাকর্তা হয়ে যায়। লকডাউনে এমন প্রমাণও মিলছে।”
লকডাউনের আগে থেকেই স্কুল বন্ধ। কবে খুলবে তা ঠিক নেই। তাই বলে তো পড়াশোনা থেমে থাকতে পারে না। শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, দীর্ঘ দিন পড়াশোনার বাইরে থাকলে পড়ুয়ারা অনেক কিছু যেমন ভুলে যাবে, তেমনিই তাদের একাগ্রতারও ক্ষতি হবে। তাই যেভাবেই হোক দ্রুত পড়াশোনা শুরু করতে চাইছে স্কুলগুলি। জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর বালিকা বিদ্যালয় শুরু করেছে স্মার্টফোনে পড়াশোনা। নবম এবং দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সেই গ্রুপে সব বিষয়ের শিক্ষিকারাও রয়েছেন। বাড়িতে বসে শিক্ষিকারা ক্লাস নেওয়ার ভিডিয়ো তৈরি করে গ্রুপে দিচ্ছেন। সেগুলি দেখে পড়ুয়ারা নিজেদের প্রশ্ন গ্রুপে জানাচ্ছে, তার উত্তর হয় লিখে না হলে ভিডিয়োর মাধ্যমে দিচ্ছেন শিক্ষিকারা।
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুনীপা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল বন্ধ বলে তো চুপচাপ বসে থাকা যায় না। মোবাইলের মাধ্যমেই পড়াশোনা করাচ্ছি। একসময়ে আমরাই অভিবাবকদের বলতাম মোবাইল বা স্মার্টফোন থেকে পড়ুয়াদের দূরে রাখতে। এখন অভিভাবকদের আমরাই বলছি পড়ুয়াদের ফোন ব্যবহার করতেদিতে। এই সময়ে প্রযুত্তির সাহায্য নিতেই হবে।”
শিক্ষাবিদ ধীরাজমোহন ঘোষ স্মৃতি হাতড়ে মনে করছেন তিনি জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক থাকাকালীন একশোরও বেশি স্মার্টফোন কেড়ে নিয়েছিলেন, স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসায় পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। এ দিন সদর গার্লসের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ধীরাজবাবু বলেছেন, “এখন সে সব কথা মনে পড়লে চলবে না। সদর গালর্স যা করছে তা খুবই ভাল। সমাজের উপকার হবে। যে সব পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন নেই, তাঁদের পড়শিদের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব মেনে পড়াশোনা চালানো যায় কিনা তাও দেখা দরকার।”
লকডাউনে পড়ুয়াদের স্মার্টফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিলেও, করোনা আশঙ্কা দূর হলে কিন্তু স্কুলে মোবাইল ফের নৈব নৈব চ! সেটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সদর গার্লসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুনীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “স্কুল খুলে গেলে কিন্তু
স্কুলে পড়ুয়ারা মোবাইল আনতে পারবে না!”