কোচবিহারে দীর্ঘদিন অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে পানীয় জলের রিজার্ভার তৈরির কাজ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
তিন বছর ধরে পড়ে রয়েছে টাকা। এখনও তোর্সা নদীর জল পরিস্রুত করে পানীয় হিসেবে সরবরাহ করতে তেমন কোনও উদ্যোগই নেয়নি পুরসভা। এমনই অভিযোগ তুলছেন রাজ-শহরের বাসিন্দারা।
শহরের প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানীয় জল নিয়ে কমবেশি সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তা চরমে ওঠে। তেষ্টার জলটুকু জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটে যায়। তোর্সা নদীর জল পরিস্রুত করে তা শহরে সরবরাহ করা হলে সঙ্কট কাটবে বলে আশা করেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু এখনও তাঁদের বাঁচতে হচ্ছে সেই আশা নিয়েই। অথচ টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরে কাজ শুরু হলে এতদিনে শহরের পানীয় জল সমস্যার সমাধান হয়ে যেত বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই।
শেষ মুহূর্তে টাকা ফিরে যাওয়ার ঊপক্রম হলে তড়িঘড়ি করে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শুরু করা হয়। কোচবিহারের বিবেকানন্দে স্ট্রিটে শান্তিবন এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেই জলপ্রকল্প নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও তা নিয়েই এখন আশায় বুক বাঁধছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অনেকেরই আশা, ওই জল সরবরাহের কাজ শুরু হলে পানীয় জলের সমস্যা পুরোপুরি মিটে যাবে। সেই আশ্বাস দিয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষও। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার দাবি, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পাইপলাইনের কাজও শুরু করা হবে। পুরসভার চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য আশা প্রকাশ করেন, “আগামী এক বছরের মধ্যে ওই প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন বাসিন্দারা।”
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় এক দশক আগে পানীয় জলের নতুন প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে পানীয় জলের প্রকল্পের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়েও দেওয়া হয় পুরসভার হাতে। দীর্ঘদিন ধরে টাকা পড়ে থাকলেও পুরসভা বিষয়টি নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে-র। তিনি অভিযোগ করেন, “কিছু পাইপ কেনা ছাড়া পুর কর্তৃপক্ষ কোনও কাজ করেননি। বহু বছর ধরে ওই টাকা পড়ে থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু টাকা খরচ করে পাইপ কেনা হয়েছে। তা নিয়েও মানুষের সন্দেহ আছে।” দিন কয়েক আগে ওই প্রকল্পের কাজের শিলান্যাস করা হয়। তা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ ওঠে তৃণমূল পরিচালিত পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বামেরাও ওই বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা বলেন, “ওই প্রকল্প নিয়ে আমরা বার বার সরব হয়েছি। এতদিনে ওই কাজ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। পুর-উদাসীনতা মানুষকে জলকষ্টে ফেলেছে।”
শুধু বিরোধী দলগুলি নয়, ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে এত দেরি হল কেন তা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ বাসিন্দারাও। তবে সেই কাজিয়ার মধ্যে তাঁরা যেতে চান না। তাঁরা এখন চাইছেন কাজ যখন শুরু হয়েছে তা দ্রুত গতিতে শেষ করা হোক। ১২ নম্বরের ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিল্লোল সরকার বলেন, “এখন আমরা আশায় রয়েছি কবে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, ওই প্রকল্পের জল পেতে শুরু করব আমরা। তাহলে অন্তত জলকষ্টের হাত থেকে বাঁচব।”