হাসপাতালের সব বিভাগে ছবিটা একই

মঙ্গলবার সকাল ১০ টা। কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গুটিকয়েক রোগীর ভিড়। তাঁদের কেউ এসেছেন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে। কেউ বা পুরনো ড্রেসিং কাটাতে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখিয়ে জরুরি বিভাগের ঘরে বসলেন তাঁরা।

Advertisement

অরিন্দম সাহা ও নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার ও মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০২:২৪
Share:

কোচবিহারে সেলাই করছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।—নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার সকাল ১০ টা। কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গুটিকয়েক রোগীর ভিড়। তাঁদের কেউ এসেছেন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে। কেউ বা পুরনো ড্রেসিং কাটাতে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখিয়ে জরুরি বিভাগের ঘরে বসলেন তাঁরা। ধারে কাছে নার্সদের কাউকে দেখা গেল না। এগিয়ে এলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। অভিযোগ, তিনি খাতায়-কলমে চতুর্থশ্রেণির কর্মী। পর পর একা হাতে কারও ড্রেসিং কাটলেন। কারও কাটাছেঁড়া সেলাই করলেন।

Advertisement

এটাই কোচবিহার জেলা হাসপাতালের রোজকার চিত্র। জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি মহকুমা হাসপাতালগুলি নিয়েও একই ধরণের অভিযোগ রয়েছে। বালুরঘাটে নার্স সদ্যোজাতের আঙুল কেটে নেওয়ার ঘটনার পরও বদলায়নি ওই অবস্থা। কোচবিহার জেলা হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন অবশ্য বলেন, “ছোটখাটো সমস্যায় অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের দিয়ে জরুরি বিভাগের কাজ চালানো হয়। সেটাও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে। রোগীর আঘাত গুরুতর হলে অস্ত্রোপচার কক্ষে পাঠানো হয়। কোনও সমস্যা হচ্ছে না।” মাথাভাঙা হাসপাতালের সুপার শান্তনু পাত্র বলেন, “কখনও কখনও একসঙ্গে অনেক রোগী চলে আসলে সেক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা চিকিৎসকদের সহযোগিতা করেন। তাঁরা কখনও সেলাইয়ের কাজ করেন না। মাঝে মধ্যে ব্যান্ডেজের কাজ করেন।” জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা অবশ্য বলেন, “চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম থাকায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের উপরে ভরসা করতে হয়। আমরা শূন্যপদ পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছি। সেটা হলে ওই সমস্যা থাকবে না।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলা হাসপাতালে দৈনিক জরুরি বিভাগে গড়ে শতাধিক রোগী আসেন। তাঁদের সেলাই থেকে শুরু করে ড্রেসিং সামলাতে চারজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দায়িত্বে থাকেন। মঙ্গলবার বাবুরহাটের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মইনুদ্দিন মিয়াঁ জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাইকেল থেকে পড়ে তিনি জখম হন। জরুরি বিভাগে থাকা চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী তাঁর পায়ের ক্ষতে একাধিক সেলাই করেন। মইনুদ্দিনের আত্মীয় মজিদুল মিয়াঁ বলেন, “জরুরি বিভাগে নার্সদের দেখিনি। ওই ব্যক্তি সেলাই করেন। ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার ছিল না। বাইরে চিকিৎসার সামর্থ্য আমাদের নেই।” এ দিন কোচবিহার শহরের চাকিরমোড়ের বাসিন্দা স্বরাজ সাহা ড্রেসিং করাতে এসেছিলেন। তাঁকেও সামলান চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বলেন, “বহুদিন থেকে আমরা এই কাজ করছি। বড় কোনও সমস্যা হলে ওটিতে পাঠানো হয়। এটা আমাদের কাজ নয় ঠিকই কিন্তু মানুষের সুবিধের জন্য আপত্তি করি না।”

Advertisement

মাথাভাঙার ডিওয়াইএফ নেতা কাজল রায় বলেন, “মাথাভাঙা হাসপাতালে রাতের দিকে চিকিৎসক থাকে না বললেই চলে। তখন তো সমস্ত কাজ চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই করেন। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে অন্তর্বিভাগেও বহু কাজেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দেখা যায়। ভুলের খেসারত রোগীদের ভুগতে হতেই পারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement