উত্তপ্ত: সিপিএমের কৃষক সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে
সিপিএমের কৃষক সংগঠনের ডাকা জেল ভরো আন্দোলনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্সকন্যা এলাকা৷ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে ৯ জন পুলিশ কর্মী-সহ ৩৫ জন জখম হন৷ জখম হয়েছেন তিন সাংবাদিকও৷ পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের দশটি সেল ছুড়তে হয় পুলিশকে৷ আন্দোলনকারীদের হঠাতে পুলিশ শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালায় বলেও অভিযোগ৷ যদিও পুলিশকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন৷ এখনও ১০২ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
চা বাগান ধর্মঘটে এই জেলাতে মোটামুটি সাড়া মিলেছে। তারপরে এ দিনও বামেদের জেল ভরো আন্দোলনের পরে বিরোধীরা খুশি। এই কর্মসূচিতে সিপিএমের কৃষক সংগঠন ছাড়াও সিটু ও দলের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন৷ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন৷ দুপুর দুটো নাগাদ শুরু হয় মিছিল৷
গোলমাল এড়াতে ডুয়ার্সকন্যার সামনে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ দুপুর আড়াইটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় ডুয়ার্সকন্যার সামনে৷ আন্দোলনকারীরা দুটো ব্যারিকেড ভেঙে তৃতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মধ্যে পড়তে হয় তাদের৷ তখনই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধ লেগে যায়৷
তত ক্ষণে পাথরের আঘাতে তিন মহিলা কনস্টেবল সহ নয় জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন৷ তাদের তড়িঘিড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আলিপুরদুয়ার থানার আইসি জয়দেব ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীর গায়েও ঢিল পড়ে বলে অভিযোগ৷ আনন্দবাজার পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক নারায়ণ দে সহ তিন সাংবাদিকও পাথরের ঘায়ে জখম হন৷ কৃষকসভার জেলা সভাপতি তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বেপরোয়া ভাবে লাঠি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়, শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও ছুড়েছে৷ পুলিশের লাঠির আঘাতে আমাদের ২৬ জন জখম হয়েছেন৷’’
কিন্তু কেন আচমকা এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? জেলার পুলিশ কর্তাদের একাংশের কথায়, মিছিলের একটা বড় অংশের উপর নেতাদের কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না৷ যদিও কৃষক সভার জেলা যুগ্ম সম্পাদক কিশোর দাসের অভিযোগ, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে৷ যার ফলে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷’’ যদিও পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, আন্দোলনকারীরা ডুয়ার্সকন্যায় আসার আগেই সঙ্গে পাথর নিয়ে এসেছিল৷
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, ডুয়ার্সকন্যা চত্বরে ১৪৪ ধারা বজায় থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা জোর করে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে৷ বাধা দিতে গেলে পুলিশকে আক্রমণ করে৷ এরপর বাধ্য হয়েই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়৷
জেল ভরো আন্দোলনে এদিন কোচবিহারেও সামিল হয় সিপিএম কর্মীরা। জেলাশাসকের দফতরের সামনে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হয়। পুলিশ কর্তারা সবাইকে গ্রেফতার করা হল ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।