অবহেলিত: কয়েকশো বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী। নিজস্ব চিত্র
দুই দশক পেরিয়ে গিয়েছে। নতুন করে কোনও খননের কাজ হয়নি। অভিযোগ, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) উদাসীনতায় কয়েকশো বছর আগের খেন রাজাদের ইতিহাস অবহেলায় পড়ে আছে কোচবিহারের গোসানিমারিতে। এবারের বাজেটেও এএসআইয়ের তালিকায় নেই গোসানিমারি। এ নিয়ে আশাহত কোচবিহার।
গোসানিমারির ইতিহাস ছ’শো বছরেরও বেশি প্রাচীন। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের কোনও এক সময় খেন রাজবংশের আমলে গোসানিমারিতে রাজপাট গড়ে উঠেছিল। কালের নিয়মে সেই রাজপাটের ধ্বংসাবশেষ আজ মাটির গর্ভে। আজ থেকে দু’শো বছর আগে এর অস্তিত্ব প্রথম জানা গেলেও ১৯৯৯ সালে সরকারি ভাবে এখানে খননকাজ শুরু হয়। তখন বহু প্রাচীন মূর্তি, পুরনো ইটের তৈরি কুয়ো, দেওয়াল, রুপোর মুদ্রার হদিশ মেলে। কিন্তু তারপর থেকেই খননকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধুঁকছে প্রাচীন ওই ঐতিহ্য। দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে অন্তত ১২টি পাথরের প্রাচীন মূর্তি। সেগুলি এখন ঘরবন্দি হয়ে পড়ে আছে। ইটের তৈরি কুয়ো আর দেওয়ালে শ্যাওলা জমেছে। অভিযোগ, রাজপাট ঢিবির কাছে টাঁকশালের নিদর্শনের নানা চিহ্ন আজ ধ্বংসের মুখে। এসব নিয়ে এএসআইকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ শনিবার বলেন, “বাজেটে এবারে তেমন কিছুই নেই। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলগুলির দিকে কোনও নজরই দেওয়া হল না।”
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার জানান, তাঁদের সংগঠনের তরফে গোসানিমারিতে নতুন করে খনন শুরু করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের জন্য এএসআইয়ের নতুন সার্কেল প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্রগুলি গুরুত্ব পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” হেরিটেজ সোসাইটির দিনহাটা শাখার সম্পাদক শঙ্খনাদ আচার্য বলেন, “গোসানিমারিতে একটি ইতিহাস চাপা পড়ে আছে। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন মাটির নীচে পড়ে রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত গোসানিমারিতে খনন শুরু হোক।”
দু’দশক আগে এএসআইয়ের খননের পর পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন পর্যটকেরা ভিড় করেন এখানে। রাজপাটের কাছ ঘেঁষে রয়েছে কামতেশ্বরী মন্দির, শাল বাগান। বাসিন্দাদের দাবি, এখানে খননকাজ সম্পূর্ণ করা উচিত। তাতে এলাকার আকর্ষণ যেমন বাড়বে, তেমনই প্রাচীন একটা ইতিহাস উঠে আসবে।