প্রতীকী ছবি।
রূপশ্রী প্রকল্পে অনিয়ম কাণ্ডে তদন্তের মাঝেই এ দিন টাকা ফেরত দিয়ে গেলেন অভিযুক্ত দুই মহিলা চেনো খাতুন ও সোনা বিবি। অন্য দিকে, বদলি করা হল কালিয়াচক ২ ব্লকের বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্তকে। তিনি এই অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছিলেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুরে কালিয়াচক ২ ব্লকের বিডিও অফিসে এসে এই অনিয়ম কাণ্ডে গঠিত তিন সদস্যের প্রশাসনিক তদন্তকারীদের কাছে দু'জনেই নগদে ২৫ হাজার টাকা করে ফেরত দেন। লিখিত মুচলেকা দিয়ে ওই দুই মহিলা স্বীকার করেছেন যে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার করে টাকা ঢুকলেও সে সম্বন্ধে তাঁদের ধারণা ছিল না। তাঁদের অজান্তে কেউ বা কারা তাঁদের নথিপত্র নিয়ে রূপশ্রী প্রকল্পের ওই টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে বলেই তাঁদের দাবি। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা যেন না নেওয়া হয়, সে আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিকে, ব্লক প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনায় বড়সড় চক্র জড়িয়ে আছে এবং সেই চক্রের হদিশ পেতে সম্ভবত আজ বুধবার মোথাবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন কালিয়াচক ২ ব্লকের বিডিও।
ভুয়ো নথি দাখিল করে রূপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা করে তোলার অভিযোগ উঠেছিল পঞ্চানন্দপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানটোলার বাসিন্দা চেনো খাতুন ও সোনা বিবির বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করে ব্লক প্রশাসন। গত ২ তারিখ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তকারী দল অভিযুক্ত দুই মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের বক্তব্যে অসঙ্গতি পায়। সে কারণে তাঁদের সোমবার শুনানির জন্য বিডিও অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা আসেননি। ফের শুনানির জন্য বুধবার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু একদিন আগেই এ দিন দুপুরে ওই দুই মহিলা এসে মুচলেকা লিখে তদন্তকারীদের কাছে ২৫ হাজার টাকা করে ফেরত দেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ওই দুই মহিলার নাম রূপশ্রী প্রকল্পের প্রাপক তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছিল। সে সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের এক কর্মী তদন্ত করে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেন। এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে। চেনো এখন চার সন্তানের মা এবং তার বড় ছেলের বয়সই ২২ বছর। বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। অভিযুক্ত দুই মহিলা এদিন টাকা ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু এর পিছনে বড়সড় চক্র রয়েছে। তার হদিস পেতে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে।’’
এরই মধ্যে অবশ্য বদলি করা হল অনির্বাণকে। কাজে যোগদানের মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যেই বদলি করা হল তাঁকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার নবান্নের যুগ্ম সচিবের এক নির্দেশনামায় তাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সদরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে থাকা রমল সিংহ বিরদিকে। এত কম সময়ের মধ্যে কেন এই বিডিওকে বদলি করা হল, তা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ব্লকে রূপশ্রী প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু করাতেই কি তড়িঘড়ি এই বদলি? বিষয়টি নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের কেউ মুখ খুলতে চাননি। বিডিও নিজেও কিছু বলতে চাননি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচক ২ ব্লকের বিডিও পদে এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছিলেন অনির্বাণ। সোমবার নবান্ন থেকে এক নির্দেশনামায় মালদহ জেলার চার জন বিডিওকে বদলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এই বিডিও। বিরোধীদের বক্তব্য, তিনি দ্রুত তদন্ত শুরু করেছিলেন বলেই সম্ভবত বদলি হতে হল। কালিয়াচক ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দুলাল শেখের অভিযোগ, রূপশ্রী প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের ঘটনার তদন্তে শাসকদল তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের নাম উঠে আসতে পারে। তাই তড়িঘড়ি বিডিওকে বদলি করা হল। কারণ ওই প্রকল্পে অনুদান পেতে উপভোক্তা মহিলাদের পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছ থেকে বিয়ে হয়নি বলে শংসাপত্র নিতে হয়। এখন ব্লকের পঞ্চায়েত সব তৃণমূলের দখলেই।
তৃণমূলের অন্যতম জেলা কো-অর্ডিনেটর হেমন্ত শর্মা অবশ্য বলেন, ‘‘বদলির বিষয়টি প্রশাসনিক বিষয়। রূপশ্রী প্রকল্পের তদন্তকে জড়িয়ে বদলির যে সম্পর্ক বিরোধীরা বলছে তা ভিত্তিহীন।’’