বাড়ি ধসে মৃত দুই বোন

প্রবল বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল দুই শিশুকন্যার। দক্ষিণ দিনাজপুরের নানা জায়গাতেই বৃহস্পতিরবার রাতভর ব্যাপক বৃষ্টির জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জমি জলের তলায় চলে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে চাষেরও। শুক্রবার জল নিকাশির জন্য কালভার্টের দাবিতে বালুরঘাট ও কুমারগঞ্জ ব্লকের দু’জায়গায় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে, কোথাও পাকা রাস্তা কেটে বিক্ষোভ দেখান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০২:০৬
Share:

বংশীহারিতে মৃত দুই শিশুর শোকার্ত পরিজনেরা।

প্রবল বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল দুই শিশুকন্যার। দক্ষিণ দিনাজপুরের নানা জায়গাতেই বৃহস্পতিরবার রাতভর ব্যাপক বৃষ্টির জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জমি জলের তলায় চলে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে চাষেরও। শুক্রবার জল নিকাশির জন্য কালভার্টের দাবিতে বালুরঘাট ও কুমারগঞ্জ ব্লকের দু’জায়গায় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে, কোথাও পাকা রাস্তা কেটে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের গিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। এ দিন সকালে বালুরঘাট শহরের একাধিক ওয়ার্ডেও জল জমে বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে বংশীহারি ব্লকের ধুমপাড়া এলাকায় মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়ে মারা যায় বাবলি পারভিন (২) এবং মীনা পারভিন (৩)। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই খুড়তুতো বোন পাড়ায় খেলছিল। সন্ধ্যার পরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে তারা বাড়িতে যাওয়ার জন্য ছুটতে থাকে। সেসময় পাড়ার গলির কাছে এক আত্মীয়ের মাটির ঘরের দেওয়াল তাদের উপরে ভেঙে পড়ে। রাত নটা নাগাদ বৃষ্টি একটু কমলে আত্মীয়রা তাদের খোঁজ করতে বেরিয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় রসিদপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

রাতভর বৃষ্টির জেরে জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকার ধানের জমি ডুবে গিয়েছে। খাঁড়ির জল উপচে কুমারগঞ্জের মোহনা এলাকার একাংশ ভাসিয়ে দেয়। ঘরবাড়িতেও জল ঢুলে যায়। এ দিন সকাল ১০টা থেকে নিকাশি নালা সংস্কারের দাবিতে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা মোহনা মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ওই বিক্ষোভে সামিল আইএনটিটিইউসি নেত্রী রঞ্জনা চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ‘‘এলাকার কালভার্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার ফলে জল বের হতে না পেরে মাঠঘাট জলমগ্ন হয়ে বাসিন্দারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন।’’ খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ যায়। পরে কালভার্ট তৈরির বিষয়ে বিডিওর আশ্বাসে দুঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

একই পরিস্থিতির মুখে পড়ে বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা অঞ্চলের আটইর এলাকায় পিচের রাস্তা কেটে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে এলাকায় যান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায়, ডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান কবিতা সরকার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংস্কারের অভাবে হিউম পাইপ দিয়ে জল গড়ায় না। তার ফলে আটইর-সহ তারাগঞ্জ, মটরা, বিজয়পুর, হলদিডাঙা, ফরিদপুর এবং মথুরাপুর এলাকার চাষের জমি থেকে রাস্তা ও বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত সভাপতি প্রবীরবাবু বলেন, এলাকায় একটি কালভার্ট তৈরির টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। বর্ষার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। বৃষ্টি কমলেই কালভার্ট তৈরির কাজ শুরু হবে।

তবে এই বৃষ্টি আমন ধান চাষের সহায়ক হয়েছে বলে দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষি আধিকারিক উৎপল মণ্ডল জানান। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছরে জেলায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাষিরা ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ কর ফেলেছেন। জমিতে জল জমলেও তা ধানের ক্ষতি হবে না।’’ জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, গত রাতে জেলায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ছবি: অমিত মোহান্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement