মৃত: বিশ্বাস গুরুঙ্গ। (ডানদিকে) তাহিদুল রহমান। নিজস্ব চিত্র
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারায় শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের (সদর) গাড়ির চালক এবং এক দেহরক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। আরেকজন দেহরক্ষী গুরুতর জখম অবস্থায় মাটিগাড়ায় একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাগডোগরার গঙ্গারাম চা বাগান এলাকায় কলকাতাগামী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটিতে চালক ছাড়াও ডিসি সুদীপ সরকারের দুই দেহরক্ষী ছিলেন। রাত ১২টা নাগাদ বড়দিনের ডিউটির পর ডিসিকে পিনটেজ ভিলেজের আবাসনে নামিয়ে তিনজন ফিরছিলেন। অফিসারদের অনুমতিতেই নীলবাতির গাড়িটি নিয়ে তিনজন বিধাননগরে এক সহকর্মীর বাড়িতে যান। নিমন্ত্রণ রক্ষা করে শিলিগুড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম বিশ্বাস গুরুঙ্গ (৩২) এবং তাহিদুল রহমান (৩১)। গাড়ি চালক বিশ্বাসের বাড়ি দার্জিলিঙে। আর তাহিদুলের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। জখম রূপম দেবনাথের চিকিৎসা চলছে। তিনজনই শিলিগুড়ি পুলিশের কনস্টেবল। তাঁরা ডিসি’র গাড়ির চালক এবং দেহরক্ষী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। গাড়িটি ট্রাকের পিছনে এমনভাবে ঢুকে যায় যে সামনের দিকটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। সেটিকে বার করতে পুলিশ কর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। রাত ১টা নাগাদ কোনওরকমে তিনজনকে উদ্ধার করে মাটিগাড়ার হিমাঞ্চল বিহারের একটি নার্সিংহোমে আনা হয়। চিকিৎসকরা বিশ্বাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিন দুপুরে তাহিদুল মারা যান।
চিকিৎসকেরা জানান, তিনজনেরই মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত ছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিৎসাধীন এক কনস্টেবলকে দেখে আসেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। জখম কনস্টেবলের চিকিৎসা ব্যবস্থারও তদারকি করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘ট্রাকটি অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল। কুয়াশা ছিল। পুলিশের গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারেন বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পর সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাথর বোঝাই এবং বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলার রাস্তায় নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। রাতের ওই ঘটনার পর পুলিশ মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। আধিকারিকরা জানান, পুলিশের চালকেরা অনেক সময়ই জোরে গাড়ি চালান ঠিকই। কিন্তু ট্রাকটি অন্ধকারে পিছনের ব্যাক লাইট বা ইন্ডিকেটর না জ্বালিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল। চালক কুয়াশায় তা বুঝতে পারেননি বলেই তাঁদের ধারণা। ঘটনার পরই পালিয়ে গিয়েছেন ট্রাকের চালক।