হিংসা চলছেই, উত্তপ্ত উত্তর

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। বাড়ি ভাঙচুর, দলীয় কার্যালয়ে হামলা, মারধর চলছে লাগাতার। কখনও অভিযোগের কাঠগড়ায় শাসকদল। কখনও বিরোধীরা। রক্ত ঝড়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরেও। আহত বেশ কয়েক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগে সিপিএমের পার্টি অফিসে ঘর-ছাড়া সমর্থকেরা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। বাড়ি ভাঙচুর, দলীয় কার্যালয়ে হামলা, মারধর চলছে লাগাতার। কখনও অভিযোগের কাঠগড়ায় শাসকদল। কখনও বিরোধীরা। রক্ত ঝড়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরেও। আহত বেশ কয়েক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ

Advertisement

ভোটের ফল খারাপ হতেই উত্তপ্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এবং কুমারগঞ্জ। শুক্রবার রাতে গঙ্গারামপুর থানার দুর্গাপুর এলাকায় সংঘর্ষে ৮ জন তৃণমূল নেতাকর্মী জখম হন। এরপর ২৪ ঘন্টা না কাটতেই শনিবার বিকেলে কুমারগঞ্জ থানার ডাঙারহাট এলাকায় বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ৩ জন জখম হন। তাদের মধ্যে ১ জনকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে গঙ্গারামপুরের দুর্গাপুরে সংঘর্ষ বাধলে সত্যেন রায় অনুগামী এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বাবলা নট্ট সহ মোট ৮ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৪ জনকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাথায় লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম বাবলাবাবুকে রাতেই গঙ্গারামপুর থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হামলাকারী তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা প্রথমে আমাদের পার্টি অফিসে হানা দিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর ওই দলটি বাবলাবাবুদের উপর হামলা চালিয়ে নজর ঘোরাতে এখন সিপিএমের উপর দায় চাপাচ্ছে।’’ গঙ্গারামপুরের তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার কাউন্সিলার অশোক বর্ধনের অভিযোগের তির বামেদের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সিপিএমের কর্মী সমর্থকেরা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। তাতে ৮ জন জখম হন।’’

শনিবার বিকেলে ডাঙারহাট এলাকায় কুমারগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী তোরাফ হোসেন মণ্ডলের জয়ে বিজয় মিছিল বের করে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। ওই মিছিল থেকে এক সিপিএম কর্মীকে জোর করে আবির মাখানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বচসা শুরু হয়। জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের তোরাফ বিরোধীগোষ্ঠী। অভিযোগ, এরপর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এলাকার তৃণমূল নেতা জাহির হোসেন মণ্ডলের বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালানো হয়। লোহার রড়ের আঘাতে জখম জাহির হোসেনকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা তৃণমূলের দুই জেলা নেতা বিপ্লব মিত্র এবং সত্যেন রায় পরাজিত হওয়ার পর থেকেই দু’পক্ষের অনুগামী কর্মী সমর্থকেরা ফুঁসছেন বলে অভিযোগ।

.

সিপিএম কার্যালয়ে হামলা

শুক্রবার রাতে মালদহের গাজলে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সত্য নারায়ণ প্রসাদ। তৃণমূলের একজনও আহত হয়েছে বলে দাবি। দু’জনকেই গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, দুই তরফের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

গাজল সহ মালদহ জেলার ১২টি আসনেই এ বার ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। ওই কেন্দ্রের তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক সুশীল রায়কে প্রায় ২০ হাজার ভোটে হারান সিপিএম প্রার্থী দিপালী বিশ্বাস। এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । অভিযোগ, ওইদিন রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ গাজলের আদর্শ পল্লী এলাকায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা হামলা চালায়। সেই সময় দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সত্যনারায়ণ প্রসাদ। মারধর করা হয় তাঁকে। এরপরেই শুরু হয়ে যায় দু’ পক্ষের মধ্যে বাঁশ লাঠি নিয়ে সংঘর্ষ। গাজল থানার পুলিশের উপস্থিতিতেও চলে ইট বৃষ্টিও। পরে মালদহ থেকে বাড়তি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তৃণমূল কর্মীকে মার

জমিতে কাজ করতে যাওয়ার পথে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল রায়গঞ্জের মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভিটিবাড়ি এলাকায়। শনিবার দুপুরে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় দুষ্কৃতীদের মারে ওই এলাকারই বাসিন্দা সাদিরুল ইসলাম নামে ওই তৃণমূল কর্মীর মাথা ফেটে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সাদিরুলবাবু তৃণমূলের মাড়াইকুড়া অঞ্চল কমিটির সদস্য।

সাদিরুলবাবু কথায়, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে আমি রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু দে’র সমর্থনে প্রচার করেছিলাম। সেই আক্রোশেই এ দিন কংগ্রেস ও সিপিএমের কর্মীরা আমাকে আটক করে মারধর করে।’’

যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ। তাঁদের কথায়, ‘‘যতটুকু শুনেছি, জমি নিয়ে বিবাদের জেরে ওই তৃণমূল কর্মীর উপর হামলা হয়েছে। রায়গঞ্জে জোটপ্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত জয়ী হওয়ায় ঘটনাটিকে এখন রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অপপ্রচারের চেষ্টা চলছে।’’

ছিটমহলেও হামলা

সাবেক ছিটমহলেও হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে শীতলখুচি বিধানসভা কেন্দ্রের নলগ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসেনের অভিযোগ, এ দিন সকালে তৃণমূলের কর্মীরা তাঁর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরিবারের সদস্যদের মারধরের পাশাপাশি হালের গরু নিয়ে চলে যায়। দুলালবাবু বলেন, “আমি নিজেও তৃণমূল করি। তার পরেও কেন আমার বাড়িতে হামলা হল বুঝতে পাচ্ছি না। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

নলগ্রামের পাশাপাশি এ দিন ওই বিধানসভার অন্য এলাকা এবং সিতাই, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, কোচবিহার সদর মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় শাসক দল বিরোধী দলের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সিতাইয়ে বাম সমর্থকদের ১৫০ টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তৃণমূল অবশ্য বামেদের অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “জোটের নামে ঘোঁট তৈরি হয়েছিল। তারা শুরু থেকেই পরিক্লপিত ভাবে নানা জায়গায় অশান্তির ছক কষে। ভোটে না জিততে পেরে এখনও ওই চেষ্টা করে যাচ্ছে। ”

গণনার পরে সাবেক ছিটমহল করলা, পোয়াতুর কুঠি সহ নানা জায়গা থেকে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement