অসহায়: শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে মা। ছবি: অমিত মোহান্ত।
ভর্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ এক শিশুকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
জেলার গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ির বাসিন্দা শিপ্রা দাস তাঁর দেড় বছরের অসুস্থ শিশুপুত্র সুদীপকে বুধবার সকালে বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতে সংশ্লিষ্ট শিশু চিকিৎসক শিশুটিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই বলে বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার মা ও আত্মীয়রা জেলাশাসকের কাছে যান। শিপ্রাদেবীর অভিযোগ, ‘‘রাতেই হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল আমাদের। কিন্তু বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই বলে হাসপাতালেই ছেলের চিকিৎসা করাতে চেয়েছি।’’
জেলাশাসক না থাকায় এ দিন দুপুরে তাঁরা বালুরঘাটে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে গিয়ে ধর্না দেন। কিন্তু মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও অফিসে ছিলেন না।
শেষে জেলাশাসকের ফোন পেয়ে বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার তপন বিশ্বাস বিকেল ৫টা নাগাদ শিশুটিকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ফের ভর্তি করে নেন। তপনবাবু বলেন, ‘‘শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলা হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজিতে রেফার করা হয়েছিল। শিশুটির হার্টে ফুটো রয়েছে। পাশাপাশি টারমোনারি হাইপারটেনশনের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত। যে কোনও মুহূর্তে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।’’ সংশ্লিষ্ট শিশু চিকিৎসক সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। শিশুটিকে একটু সুস্থ করে রেফার করা হয়। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হবে বলেও হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল।’’
শিশুটির বাবা সুদেব দাস দোকানের কর্মচারি। তাঁর কথায়, ‘‘৯ মাস বয়সে ছেলের হার্টের অসুখ ধরা পড়ে। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দুর্গাপুর হাসপাতাল, পিজি হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করি। চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি করাই। সেখানে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে হার্টের চিকিৎসা হয়। পরবর্তীতে আবার সেখানে পরীক্ষার জন্য যেতে বলা হলেও আর্থিক কারণে যেতে পারিনি।’’ তিনি জানান, বুধবার শিশুটির রক্তবমি শুরু হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বালুরঘাটে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ছেলেকে এই অবস্থায় কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও তাঁর নেই। তিনি চান এখানেই ভাল চিকিৎসা হোক।