ছবি: সংগৃহীত
মঞ্জুরি কমিশনের বরাদ্দে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ বছর দেড়েক আগেও চালু ছিল। কিন্তু এখন সেই আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ মিলছিল না। সোমবার রাজ্য বাজেটে অমিত মিত্র ঘোষণা করেন, রাজ্যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিনটি কেন্দ্র গড়া হবে। তার একটি হবে শিলিগুড়িতে।
এই ঘোষণার ফলে আশার আলো দেখছেন উত্তরবঙ্গের শিক্ষক ও ছাত্রেরা। তাঁদের বক্তব্য, এটা হলে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি তো বটেই, দক্ষিণে মালদহ থেকে উত্তর-পূর্বে কোচবিহার পর্যন্ত সব জায়গার পড়ুয়ারাই উৎসাহ পাবেন। প্রশাসনিক পদে আরও বেশি করে রাজ্যের মেধাবীরা উঠে আসবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের মতে, এখানে যে হেতু প্রাথমিক পরিকাঠামো আছে, অভিজ্ঞ শিক্ষকরা রয়েছেন, তাই এখানে কেন্দ্রটি দ্রুত শুরু করা যেতে পারে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগেও সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। ইউজিসি সেই ক্ষেত্রে কিছু বরাদ্দ দিত। তা বন্ধ করে দেওয়াতে সেই প্রশিক্ষণ আর চলছে না। তাই রাজ্য সরকার যে উদ্যোগী হয়েছে, তা অত্যন্ত ভাল।’’
শিক্ষকদের একাংশ মনে করে, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়ারাই এই সুযোগ পেতেন। এখন আলাদা করে একটি কেন্দ্র চালু হলে বিভিন্ন জেলা থেকে উৎসাহী এবং যোগ্য প্রার্থীরা সেই সুযোগ পেতে পারবেন। শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষ জানান, উত্তরবঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় কলকাতায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হত, যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হত না। উত্তরবঙ্গ আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এলাকা। মেধাবী পড়ুয়াদের অনেকের পরিবারের অবস্থা ভাল নয়। তাই প্রচুর টাকা খরচ করে সিভিল সার্ভিসের মতো পরীক্ষায় বসার কোচিং বাইরে গিয়ে অনেকে নিতে পারেন না। সরকারি উদ্যোগে সেই ব্যবস্থা হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেব কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে।’’
পড়ুয়ারা জানান, এই উদ্যোগের ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস বেড়ে যাবে। পড়ুয়াদের সাহায্য করতে উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা এবং একসময় ইসলামপুরের এসডিও মণীশ মিশ্রের উদ্যোগে কর্ণজোড়ায় গ্রন্থাগার ভবনে ছাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আধিকারিকরা স্বেচ্ছায় সেখানে পাঠ দিতেন। কিন্তু নিয়মিত তা সম্ভব হত না। সরকারি উদ্যোগে উত্তরবঙ্গে সেই ব্যবস্থা করা হলে পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন বলেই প্রশাসনের আধিকারিকেরাও মনে করছেন।