স্বাস্থ্য দফতর নীরব থাকলেও শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পরিস্থিতি দেখতে যান তিনি।
সেখানে দু’টি বাড়িতে তিন জন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, আরও অনেকের ডেঙ্গির হয়েছে বলে জানতে পারেন। এরপরেই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মহকুমাশাসক, পুর কমিশনার, পুর সচিবদের নিয়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক ডাকেন পূর্ত দফতরের বাংলোয়। পুর কর্তৃপক্ষ মশা মারতে, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন।
পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি মহামারির আকার নিয়েছে। এ দিন ওই ওয়ার্ডে গিয়ে পরিস্থিতি আঁচ করতে পারি। ওই এলাকায় একটা জোনে ১০০ জনের মধ্যে ১২ জনের ডেঙ্গি হয়েছে। অনেক বাড়িতে তিন জন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পরিস্থিতি ভয়াবহ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওয়ার্ডগুলিতে সাফাইয়ের কাজ করতে পুর কমিশনার পুর সচিবদের বলেছি।’’ তাঁর অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষ কোনও কিছু করছেন না। কেন প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগিং মেশিনের ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
এ দিন বৈঠকের পর মন্ত্রী জানিয়ে দেন সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখবেন। শিলিগুড়ি হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গি এবং জ্বরে আক্রান্তদের সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।
এ দিন, মন্ত্রী ওয়ার্ড ঘুরে দেখার সময় পিসি সরকার রোডের বাসিন্দা পিয়ালি শর্মা অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা পদমপ্রসাদবাবু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। অথচ সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে দুর্গন্ধ যুক্ত পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার দেখে বাবাকে দেখানে ভর্তি করাননি। তিলক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। সেখানে এক দিনে ১১ হাজার টাকা বিল হলে তাঁরা চিন্তায় পড়েন।
সোমবার বাবাকে বাড়িয়ে নিয়ে আসেন। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে গেলে সমস্যা হয়। টাকা পাননি। শেষে গয়না বন্ধক রেখে জোগাড় করেন। তিনি এখনও অসুস্থ। প্লেটলেট ৯০ হাজারে রয়েছে। পদমবাবুর স্ত্রীও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে জেনে তিনি হাসপাতালের সুপারকে ওই বাড়ি থেকেই ফোন করে চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলেন।
মন্ত্রী জানান, সুপারদের সঙ্গে কথা না বলে কোনও চিকিৎসক রোগীকে রেফার করতে পারবেন না। জ্বরের রোগী গেলেই ‘সিসিইউ’-তে ভতির প্রবণতা বন্ধ করে সাধারণ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা করা গেলে সেটাই করতে হবে।
মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশ মতো আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য দফতর আমাদের যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে এ দিন পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫ জন। তবে নার্সিংহোমগুলিতে কার্ড পরীক্ষা করে প্রচুর বাসিন্দার ডেঙ্গি বলে জানানো হচ্ছে। শিলিগুড়ি হাসপাতালে বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড টেস্ট করতে যাঁরা পাঠিয়েছেন তাঁদের অনেকের রিপোর্ট পেতে সাত দিন, নয় দিন সময় লাগছে।’’
ওয়ার্ডের সাফাই পরিষেবা নিয়েও এ দিন অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে। এ দিন সভায় শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গত সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্তের ১১২ জনের তালিকা দিলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিল নান্টু পাল, কৃষ্ণ পালদের অভিযোগ, শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। বুকে ফেস্টুন ঢুলিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। ১০ দিনের মধ্যে রোগ ঠেকাতে ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনের কথা জানান। মেয়রের দাবি, তিনি যে তালিকা দিয়েছেন তা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া। বিরোধীদের অভিযোগ, সম্প্রতি ডেঙ্গিতে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অথচ তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি পুর কর্তৃপক্ষ।
ওয়ার্ডগুলিতে মশা মারার তেল দেওয়া হচ্ছে না, ফগিং করা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ব্লিচিং নেই। নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করতে ব্যর্থ পুর কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রী স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে ৫ হাজার কেজি ব্লিচিং সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে এ দিন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শনের সময় এলাকার জঞ্জাল ঠিক মতো সাফাই হয় না দেখাতে আবর্জনা তুলতে পুরসভার গাড়ি আসলেও তৃণমূলের লোকজন তা ফিরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পর্যটন মন্ত্রী অবশ্য তা জানেন বলে দাবি করেন।