জ্বলছে: বন্ধে গোলমাল। সামাল দিতে নিরাপত্তাবাহিনী। ইসলামপুরে। নিজস্ব চিত্র
বুধবার বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধে অগ্নিগর্ভ ছিল ইসলামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাস ভাঙচুর, আগুন তো আছেই, কোথাও আবার তৃণমূল-বিজেপি পরস্পরের দিকে গুলি ছোড়ার অভিযোগও তুলেছে। ব্যবসায়ীদের উপরে কেন হামলা হয়েছে, সেই প্রশ্নে আজ, বৃহস্পতিবার ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছে ইসলামপুর মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি দামোদর অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমাদের উপরে হামলার প্রতিবাদে ব্যবসা বন্ধ ডাকা হয়েছে।’’ বন্ধ দোকানে দলীয় সমর্থকদের ঢিল ছোড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমি সমর্থকদের বাধা দিয়েছি। বিষয়টি দেখছি।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক সুরজিৎ সেনের দাবি, ছক কষেই তৃণমূলের লোকেরা শহরে ঢুকে গোলমাল পাকিয়েছে।
এ দিন সকাল থেকেই ইসলামপুরে একাধিক বাসে ভাঙচুর, আগুন লাগানো হয়। সকাল থেকে ডালখোলায় রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বন্ধ সমর্থকেরা। অবরোধ হয় লক্ষণীয়া এলাকায় রায়গঞ্জ-বিন্দল রাজ্য সড়ক, হেমতাবাদ বাজার এলাকায় রায়গঞ্জ-বালুরঘাট, কালিয়াগঞ্জের ফতেপুর ও ধনকলে। ডালখোলায় পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। তিন জন পুলিশ জখম হন। ডালখোলা বনধ সমর্থকেরা দুটি সরকারি বাস ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।
এ দিন করণদিঘির টুঙ্গিদিঘিতে জাতীয় সড়ক আটকে বন্ধ সমর্থকদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। পুলিশের সামনেই চলে খাওয়া-দাওয়ার। পিকেটিংয়ে ছিলেন অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন।
চোপড়ার ছোট চা বাগান এলাকার একাংশ খোলা ছিল। বিজেপি এ দিন রায়গঞ্জে সরকারি দফতর, ব্যাঙ্ক ও স্কুলের গেটে দলীয় পতাকা বেঁধে দেয়। আবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন রায়গঞ্জের এনবিএসটিসি ডিপোয় দলীয় পতাকা নিয়ে বন্ধের বিরোধিতা করে। চালকদের হেলমেটও দেওয়া হয়েছিল এনবিএসটিসি’র তরফে। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট এ দিন খোলেনি। শহরের বেসরকারি বাস স্ট্যান্ডে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জেলা আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকারকে দেখা যায় সংগঠনের লোকজনকে নিয়ে বাস চালু করতে উদ্যোগী হতে।
এ সব গোলমালের মধ্যে বড় হয়ে ওঠে ইসলামপুরের গন্ডগোল। সেখানে দুপুরের মধ্যে তিনটি সরকারি বাস জ্বালানো হয়। শুভেন্দু অধিকারীর সভার শেষে ফেরার সময়ে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ইসলামপুর থানার জীবন মোড় এলাকায় বনধ সমর্থকদের গন্ডগোল বাঁধে। দু’পক্ষই একে অন্যে বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলে। ঘটনার খবর পেয়ে আইসি-সহ পুলিশ আধিকারিকরা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলির খোলও উদ্ধার হয় বলে দাবি।
তৃণমূলের অভিযোগ, বাস লক্ষ করে গুলি ছোড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ঢিলও ছোড়েন। তাতে জখম এক তৃণমূলের সমর্থক। পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা একটি আনাজের দোকান ও একটি পানের দোকানও ভাঙচুর করেন। এর পর এলাকার বাসিন্দারা তেড়ে যেতে গেলে তাদের লক্ষ করে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কানাইয়ালাল বলেন, ‘‘এ দিন বাসগুলোকে নিষেধ করা হয়েছিল ওই রাস্তা দিয়ে যেতে। কিন্তু ফেরার সময় ওই দিক দিয়েই নিয়ে যাওয়ায় বিপত্তি হয়েছে।’’
এ দিন সকালে কলেজ মোড়ে সওয়া সাতটা নাগাদ প্রথম বেসরকারি বাসে ভাঙচুর হয়। যাতে ভুটানের কিছু পর্যটকও ছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ভোর থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে পুটিয়া মোড়ে, আশ্রমপাড়া, পালপাড়া মোড়, শ্রীকৃষ্ণপুরে, দুর্গানগরে আগুন জ্বালায় বন্ধ সমর্থকেরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়, রবার বুলেট ছোড়ে বলে অভিযোগ। আটক করা হয়েছে ৩৮ জনকে। এঁদের মধ্যে বিহারের বাসিন্দাও রয়েছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোলমালের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে, যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক দেবজিৎ সরকারকে দুর্গানগর মোড় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। (সহ-প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু, মেহেদি হেদায়েতুল্লা)