রাজ্যে প্রথম হওয়া অভিক দাসকে নিয়ে উচ্ছাস ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির। নারায়ন দে।
ছোটবেলা থেকেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য ভাবাত। সে সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স নিয়ে পড়াশোনা করে বিজ্ঞানী হতে চান উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থানাধিকারী আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম হাই স্কুলের ছাত্র অভীক দাস।
নিউ আলিপুরদুয়ার মোড় সংলগ্ন পূর্ব আনন্দ নগরের বাড়িতে বসে বুধবার দুপুরে অভীক বলেন, “প্রাচীনকাল থেকেই অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স নিয়ে গবেষণায় ভারতবর্ষ এগিয়ে রয়েছে। আর্যভট্ট, বরাহ মিহিরেরা যে ভাবে কাজ করে গিয়েছেন, তার প্রতি আমার আগ্রহ রয়েছে। শুধু তাঁদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই চাই না, আধুনিক অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সে ভারতের মুখ আরও উজ্জ্বল করতে চাই।” আগামী দিনে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স বা কলকাতার আইআইএসইআর-এ পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।
পড়াশোনার প্রতি অভীকের ভালবাসা কিন্তু নতুন নয়। অভীক যখন ছোট, তখনই তাঁর বাবা, আলিপুরদুয়ার জংশন রেলওয়ে হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক প্রবীর দাস, মা গৃহবধূ শ্যামলী তা বুঝতে পারেন। ফলে, পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি ছেলের জন্য নানা ধরনের বইও এনে দিতেন তাঁরা। বই-পোকা অভীকও যত দ্রুত সম্ভব সে বই পড়ে ফেলতেন।
অভীক এ দিন জানান, তাঁর এই সাফল্যের পিছনে যেমন স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষকেরা রয়েছেন, তেমনই তিনি প্রতিটি বিষয়ের একাধিক পাঠ্যবই পড়েছেন। কখনই মুখস্থ করায় জোর দেননি। দিনে গড়ে আট-নয় ঘণ্টা পড়াশোনা করলেও, কখনও ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি, গল্পের বই, বিশেষ করে শার্লক হোমসের গোয়েন্দা গল্প খুবই পছন্দ অভীকের। ক্রিকেট খেলা দেখতেও পছন্দ করেন তিনি। তবে আইপিএল নয়, অভীকের বেশি পছন্দ টেস্ট ক্রিকেট।
নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া দীর্ঘদিনের অভ্যাস। ফলে, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’ থেকে শুরু করে নির্বাচন ঘিরে অশান্তির খবরও রাখেন তিনি। অভীকের কথায়, “শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতিকে যাতে কোনও অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেওয়া না হয়, সেটা দেখা জরুরি। শিক্ষায় দুর্নীতি ঢুকে পড়লে সেটা কখনই ভাল হতে পারে না। কারণ, শিক্ষাই আমাদের সকলের ভিত। শিক্ষাই ভবিষ্যতের নাগরিক গড়ে দেয়।” রাজনীতি নিয়ে কোনও আগ্রহ না থাকলেও এই কৃতী চান, রাজনীতি ঘিরে সমাজে খুন-খারাপি বন্ধ হোক। মাধ্যমিকেও রাজ্যের মেধা তালিকায় ছিলেন অভীক। কিন্তু মাত্র তিন নম্বরের জন্য সেই পরীক্ষায় প্রথম স্থান ফসকে যায়। ফলে, জীবনের প্রথম পরীক্ষায় রাজ্যে চতুর্থ স্থান পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু সে সময়ই তাঁর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল কিছু করার জেদ চেপে যায়। অভীকের কথায়, “রাজ্যের মেধা তালিকায় প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে থাকব বলে আশা ছিল। প্রথম হব, ভাবিনি!”