মাছ হাতে তুলে পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র
মরা মাছ নদীতে ভাসছে। নদীর জলে ভেসে রয়েছে তেলের মতো তরল, তাতে সূর্যের আলো পড়ে নানা রং ঠিকরে বেরোচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে এমনই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে। সরকারি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এক একটি বিষকাণ্ডে ন্যূনতম একশো কেজি করে ছোট মাছের মৃত্যু হচ্ছে।
জেলা সদরের তিস্তা-করলা, শিলিগুড়ি ঘেঁষা গজলডোবায় তিস্তা থেকে ডুয়ার্সের মেটেলি, পানবাড়ি, ধুপগুড়ি সর্বত্র নদীতে বিষ ঢেলে মাছ মারার অভিযোগ আসছে।
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, তুলনামূলক বড় মাছ ধরার জন্য নদীতে বিষ ঢালা হয়। যদিও এর জেরে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাঁদা, পুঁটি, শোল, বোরোলি, কুচো চিংড়ি, চ্যাং, তিনকাটার মতো নদীয়ালি ছোট মাছগুলি। গত সপ্তাহে ডুয়ার্সে ডায়না নদীতে বিষ দিয়ে মাছ মারা হয়। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মরা মাছ নদী থেকে তোলার পরেও দিনভর রাশি রাশি মরা মাছ ভেসে উঠেছে। তার ওজন কমপক্ষে দেড়শো কেজি হবে বলে সরকারি রিপোর্ট জমা পড়েছে। মৎস্য দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, সবমিলিয়ে ওই নদীতে একদিন তিনশো কেজিরও বেশি মাছ মারা গিয়েছিল।
জলপাইগুড়ির মৎস্য আধিকারিক সুব্রত সরকার বলেন, “বিষ নদীতে ঢালা হলে কত মাছ মারা যাবে, তার কোনও আন্দাজ থাকে না। হয়তো কেউ এক কেজি মাছ মারার জন্য বিষ ঢালল। কিন্তু দেখা গেল ২০ কেজি মাছ মরে গিয়েছে। শীতের শুরুতেই পরপর কয়েকটি খবর এসেছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে জেলায় নদীয়ালি মাছের আকাল দেখা যাবে। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।”
বিষ দিয়ে মাছ ধরলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলার সংস্থান রয়েছে। পরিবেশ প্রেমীদের অভিযোগ, বিষ দিয়ে মাছ মারার একাধিক অভিযোগ উঠলেও কোনটিরই কিনারা হয়নি, অভিযুক্তরা কড়া শাস্তিও পায়নি। ২০১২ সালে জলপাইগুড়ির করলা নদীতে বিষকাণ্ডে রাজ্য জুড়ে আলোড়ন পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীও হস্তক্ষেপ করে। তারপরেও সেই ঘটনার কিনারা হয়নি, অভিযুক্তদের শাস্তিও হয়নি বলে দাবি। এমনই ফাঁক গলে এক একটা ঘটনা প্রশ্রয় পাওয়ায় বিষ দিয়ে মাছ মারার প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিযোগ। মূলত এন্ডোসালফন গোত্রের বিষ বেশি প্রয়োগ করা হয়। নদীর জলের নমুনা পরীক্ষা করে মৎস্য দফতর জেনেছে, চা বাগানের ব্যবহার করা কীটনাশকও মাছ মারতে ব্যবহার করা হয়েছে।
শীতকালেই এই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মৎস্য আধিকারিকদের দাবি, শীতের সময়ে নদীর জলে স্রোত থাকে না। স্থির জলে বিষের কাজ ভাল হয়। জাল দিয়ে বা ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে যা পরিশ্রম বিষ ঢাললে তার থেকে কম সময়ে ঢের বেশি মাছ পাওয়া যায়।
ভোরের আলো প্রকল্প লাগোয়া তিস্তায় এবং জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলা নদীতে তিনটে জায়গায় গত সপ্তাহে মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। ধূপগুড়ির জলঢাকা, পানবাড়ি, এবং মূর্তিতেও মরা মাছ ভাসতে দেখা গিয়েছে গত তিন দিনে। সব ক’টির সরকারি রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। যদিও মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, সব ক’টি ঘটনা জুড়লে অন্তত হাজার খানেক কেজি মাছ এক সপ্তাহে বিষে মারা গিয়েছে।