এক মোটরবাইক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী চেহারা নিল উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে। প্রতীকী ছবি।
এলাকার দখল নিয়ে বর্তমান বনাম প্রাক্তন প্রধানের ‘দ্বন্দ্ব’ বেশ কিছু দিন ধরে দেখে অভ্যস্ত এলাকাবাসী। এ বার এক মোটরবাইক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা রক্তক্ষয়ী চেহারা নিল উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে। শুক্রবার রাতে ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন এক তরুণী-সহ তিন জন। বাড়িতে হামলা চালিয়ে দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে প্রাক্তন প্রধান তথা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদস্য খলিলুর রহমানের ভাইপো মহম্মদ আরিফকে (২৪) খুনের অভিযোগ ওঠে জৈনগাঁও ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহম্মদ নাজিশ ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে নাজিশ এলাকাছাড়া। শনিবার এলাকায় গিয়ে গোয়ালপোখরের তৃণমূলের বিধায়ক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানি ঘোষণা করেন, ‘‘নাজিশকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার রিপোর্ট পুলিশের কাছে চেয়েছি। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে।’’
এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করেন, নাজিশ গুলি চালিয়ে থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার পরেও থানা নাজিশকে আটক না করে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ। ইসলামপুর পুলিশ-জেলার অতিরিক্ত সুপার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। অভিযোগ পেলে, পুলিশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।’’ তিনি জানান, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে ধরা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোয়ালপোখর থানার পাশে, মদিনাচকে আরিফের হার্ডওয়্যারের দোকানের সামনে গাড়ির ধাক্কায় অল্প জখম হন মোটরবাইকে থাকা আরিফের এক পরিচিত। গাড়িতে ছিলেন নাজিশের ‘অনুগামীরা’। রাত ৮টা নাগাদ ইট, বাঁশ নিয়ে দু’পক্ষ একে অপরের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, তখনই নাজিশের অনুগামীরা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হন টোটোচালক মহম্মদ বাবুল, খলিলুরের পরিবারের সদস্য মহম্মদ সইদুল এবং হাবিবা খাতুন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে।
আরিফের বাবা মহম্মদ কামরুলের অভিযোগ, ‘‘রাত ১০টা নাগাদ আমাদের বাড়িতে ঢুকে নাজিশ এবং ওর লোকজনেরা দোতলা থেকে মারধর করে, ধাক্কা মেরে ছেলেকে ফেলে দেয়। আরিফের মাথায় চোট লেগেছিল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা বলেন, ও আর নেই!’’ কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না নিহতের মা সলমা বেগম, স্ত্রী মাহি বেগম। খলিলুরের অভিযোগ, “নাজিশরা পরিকল্পিত ভাবে হামলা করে ভাইপোকে খুন করেছে।’’ তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন খলিলুর। সে কারণেও হামলা হতে পারে। এ দিন মৃতদেহ নিয়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান আরিফের পরিজনেরা। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘অনুগামীরা’ দাবি করেন, নাজিশ ঝামেলা থামাতে গিয়েছিলেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে প্রাক্তন বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতা আলি ইমরান রমজ (ভিক্টর) দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে প্রাণ গেল এক জনের। পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করুক। বেআইনি অস্ত্রও উদ্ধার করুক।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য না করে মন্ত্রী রব্বানি বলেন, ‘‘সামান্য একটি ঘটনা থেকে এত বড় কাণ্ড ঘটে যাবে, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’