দলীয় অনুমোদন ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে বির্তকে জড়ালেন শাসক দলের কয়েকজন নেতা।
রবিবার দুপুরে তৃণমূলের আঠারোখাই অঞ্চল সভাপতি নিমাই ঘোষ, ব্লক সভাপতি নান্টু বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল কর্মী মাটিগাড়া থানায় বিক্ষোভ দেখান। কয়েকটি মামলায় পুলিশ ঠিক পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওসি মৃন্ময় ঘোষকে স্মারকলিপি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি না বদলালে জোরদার আন্দোলনের ঘোষণাও করেন। দুপুরের পরেই এই আন্দোলনকে ঘিরে শাসক দলের অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়।
জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়া ওই নেতারা থানায় গিয়ে কী করে বিক্ষোভ করে স্মারকলিপি দিলেন সেই প্রশ্ন তোলেন দলেরই অনেকে। মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি গৌতম দেবের কাছেও বিষয়টি পৌঁছয়। তিনিও খোঁজ নেন। সন্ধ্যায় অবশ্য দলের পক্ষ থেকেই এই কর্মসূচিকে কার্যত ‘অস্বীকার’ করা হয়। জেলার কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের কর্মসূচি নয়। জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়া সরকারি দফতরের বিরুদ্ধে আন্দোলন হতে পারে না। আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে কর্মসূচি নিতেই পারেন। দল তাঁদের দায়িত্ব নেবে না।’’
দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি আঠারোখাই এলাকার এক মহিলাকে মারধরের পর এক তৃণমূল কর্মীর নামে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে। তেমনই, বালাসন নদী ঘাটে একটি পরিত্যক্ত ঘর দখল করার চেষ্টার অভিযোগে দলের বুথ সভাপতি-সহ ২৭ জনকে আইনি নোটিশ পাঠায়। মামলাও নথিবদ্ধ করা হয়। দল এবং পুলিশের শীর্ষ মহলের নির্দেশে তা হয় বলে খবর। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের একাংশের তা নিয়ে আপত্তি ছিল। তার জেরেই এ দিনের বিক্ষোভ বলে মনে করা হচ্ছে।
ওই নেতারা অবশ্য দলের নিয়ম ভাঙার কথা মানতে চাননি। অঞ্চল সভাপতি নিমাইবাবু বলেন, ‘‘কিছু লোকের স্বার্থের জন্য পুলিশ এসব করেছে। আমরা এটা বন্ধ করার দাবি জানাতে থানায় গিয়েছিলাম। এতে দলীয় অনুশাসন ভাঙার তো কোনও বিষয় নেই।’’ ব্লক সভাপতি নান্টুবাবু ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি। তিনি এ ব্যাপারে জড়াতে চান না বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের অনেকেই এই ঘটনার পর তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁদের মত, দার্জিলিং জেলায় পঞ্চায়েত ভোট না হলেও লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বিরাট এলাকায় ভোট আছে। এই সময় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আন্দোলন করাটা অনুচিত। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। কোনও এলাকায় সমস্যা থাকলে পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে মেটানো যেতে পারে। আন্দোলন করে নয়।
তৃণমূলের আন্দোলন নিয়ে অবশ্য পুলিশের কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ওসি থেকে এসিপি, ডিসি’রাও কিছুই বলতে চাননি।