প্রশান্ত কিশোর। —ফাইল ছবি
পুরসভা হাতে থাকবে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলে। তার মধ্যেই দলের অন্দরে শুরু হয়েছে ত্রিমুখী লড়াই। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডুর ছেলে শুভজিৎ। এই দ্বৈরথের মধ্যেই ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলের যুব নেতা অভিজিৎ দে ভৌমিকও। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে ভিতরে ভিতরে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছেন বলে খবর। তার কিছু লক্ষণ প্রকাশ্যেও এসে পড়ছে। তবে কেউ টুঁ শব্দটি করছেন না। কারণ, সকলেই জানেন, উপর থেকে ‘নিয়ন্ত্রক সুতো’টি যাদের হাতে, তাদের নাম ‘টিম পিকে’। এখনও এই শহরে ঘাঁটি গেড়েই ‘টিম পিকে’র সদস্যেরা নজর রাখছেন পুরসভার সবক’টি ওয়ার্ডে। শোনা যাচ্ছে, তাঁরা চূড়ান্ত রিপোর্টও তৈরি করছেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ অবশ্য দলের অন্দরের লড়াইয়ের বিষয়টি মানতে নারাজ। তিনি বললেন, “সমস্ত বিষয়ে দলই সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের সুযোগই নেই।” দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ও বলেন, “ঐক্যবদ্ধ ভাবেই দলের প্রচার শুরু করা হয়েছে। এবারেও দলের ফল ভালa হবে, তা বলতে পারি।” তবে যুব নেতা অভিজিৎ বা বীরেন-তনয় শুভজিৎ ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। কোচবিহার পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান ভুষণ বলেন, “কোথাও হয়তো কারও নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাবে উঠে আসছে। তা নিয়ে কোনও বিরোধ নেই। কারণ প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্ত দলনেত্রী নেবেন। সে-কথা সবাই জানেন। সেই ভাবেই প্রচার করা হচ্ছে। কারও নাম নিয়ে দাবি উঠে এলে তা দলীয় নেতৃত্বকে জানানো হবে।”
কোচবিহার পুরসভায় দীর্ঘসময় পুরপ্রধান ছিলেন বীরেন কুণ্ডু। তাঁর মৃত্যুর পরে দীপক ভট্টাচার্যকে পুরপ্রধান করা হয়। পরের বার ২০১৪ সালের পুর নির্বাচনে তৃণমূল ফের ক্ষমতা দখল করে। পুরপ্রধান করা হয় বীরেন-পত্নী রেবা কুণ্ডুকে। আড়াই বছরের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগে দল তাঁকে সরিয়ে দিয়ে ভুষণ সিংহকে বসায়। এই কয়েক বছরে পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং শহরের পরিষেবা নিয়ে শহরবাসীর অভিযোগ জমেছে প্রচুর। পুর নির্বাচনের মুখে ওই অভিযোগই তৃণমূলের কাউন্সিলর ও নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে তুলে রাজ্য নেতৃত্ব ও ‘টিম পিকে’র কাছে অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন। তার মধ্যেই ভূষণ প্রচারে নেমেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলদের কয়েকজনকেও প্রচারে-জনসংযোগে দেখা যাচ্ছে। অভিজিৎও প্রচারে নেমে পড়েছেন। শুভজিৎকে অবশ্য প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেকই প্রচার শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “আসলে বিষয়টা হচ্ছে গাছে কাঠাল গোঁফে তেলের মতো। পুরসভা দখলে আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তার মধ্যেই কে বা কার ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যান হবেন, তা নিয়ে এখন থেকেই অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে। তাতেই লড়াই হচ্ছে।”