প্রতীকী ছবি
পুরনো কর্মীরাই যে অনেকটা ভরসা, তা বুঝেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টিম পিকে’র সমীক্ষাও তাই বলছে। তাই সেই পুরনো কর্মীদের মান ভাঙাতে দলনেত্রীর নির্দেশে এবার আসরে নেমেছেন মন্ত্রী-বিধায়কেরা। কিন্তু পুরনো কর্মীদের অনেকেই এখন বিজেপিতে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, সময় থাকতে দলীয় নেতৃত্বের এসব ভাবা উচিত ছিল। আবার কারও কারও কটাক্ষ, এই সবই ভোটের জন্য। ভোট পেরোলে আর কেউ খোঁজ রাখবেন না। ফলে কোচবিহারে পুরনো সেই কর্মীদের কাছে টানতে কালঘাম ছুটছে নেতাদের। কেউ কেউ পুরনোদের হাত ধরে ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছেন।
তবে তৃণমূল নেতৃত্ব এসব কথা স্বীকারই করতে চাইছেন না। উল্টে তাঁদের বক্তব্য, সবাই তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “সবাই আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। কোথাও একটু সমস্যা হয়েছিল। সেসব মিটে গিয়েছে। সবাই সাড়া দিচ্ছেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বললেন, “আমি সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি। সকলেই আমাদের সঙ্গে আছেন।” অথচ দলেরই একটি অংশের বক্তব্য, ২০১১ সালে দল যখন ক্ষমতায় আসে, সেই সময় যে নেতা-কর্মীরা সামনের সারিতে ছিলেন তাঁদের অনেককেই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই দল ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার দল বদলে বিজেপিতেও যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই একজন দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক অশোক মণ্ডল। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের সব থেকে পুরনো বিধায়ক বলেই পরিচিত। তিনি সেই সময়ের দাপুটে বাম নেতা উদয়ন গুহকে হারিয়ে জিতেছিলেন। উদয়ন বর্তমানে দিনহাটার তৃণমূলের বিধায়ক এবং পুরসভার চেয়ারম্যান। অশোক এখন বিজেপির অন্যতম জেলা নেতা। অশোকের কথায়, “যাঁরা লড়াই করে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, গ্রামের সেই নেতা-কর্মীরা এখন আর নেই। সেই সময়ের বাম নেতারাই এখন তৃণমূলের পরিচালনায়। তাই ওই কর্মসূচির কোনও গুরুত্ব এখন আর নেই।” উদয়ন অবশ্য অশোকের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর দাবি, তিনি যে সময় দলে ছিলেন না, সেই সময়ই অশোক মণ্ডলকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। তিনি বলেন, “আমার কাছে পুরনো নেতা-কর্মীদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। তাঁরা সাড়া দিয়েছেন। এটুকু বলতে পারি।”
পুরনো তৃণমূল নেতাদের একজন গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। জেলার নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনিও। তিনি দল থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “মমতা বাংলার গর্ব সঠিক কর্মসূচি। কিন্তু যাঁদের সামনে রেখে তা প্রচার করা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই দুর্নীতিতে যুক্ত। কমবেশি সবাই তা জানেন।” তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন্, “পুরনো কর্মীদের অনেকেই নানা কারণে দূরে সরে গিয়েছিলেন। অনেকের বয়স হয়েছে, কেউ অসুস্থ হয়েছেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর বাইরে দলীয় কোনও বিষয় থাকলেও আমরা আলোচনা করছি। সবাইকে সম্মান জানানো হবে।”