রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইকের নাম ঘোষণার পরে তাঁকে ঘিরে অনুগামীদের ভিড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বাবা-মা দু’জনেই চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। স্কুল ছুটির পরে, মাঝেমধ্যেই চা বাগানে দাঁড়িয়ে বাবা-মা কী করে পাতা তুলছেন, তা দেখতেন। শিলিগুড়ির কলেজ থেকে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা শেষ করে নিজেও যোগ দিয়েছিলেন চা বাগানের কাজেই। তবে শ্রমিক হিসেবে নন, করণিক হিসেবে। আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল সভাপতি সেই প্রকাশ চিক বরাইকের কাছেই এ বার সংসদে দাঁড়িয়ে চা বলয়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরার সুযোগ এল।
বছর তেতাল্লিশের প্রকাশের কথায়, ‘‘এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অভিষেকদা (দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) ফোন করে আমাকে রাজ্যসভায় দলের প্রার্থী করার কথা জানান। দলনেত্রী যে ভাবে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সে ভাবেই আমাকে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। দল আমার উপরে আস্থা রাখায় খুশি।”
আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে তৃণমূল সোমবার যে ছ’জনকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে, তাঁদের অন্যতম আলিপুরদুয়ারের প্রকাশ। জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, প্রকাশকে রাজ্যসভার প্রার্থী করার মধ্যে দিয়ে তৃণমূল মূলত দু’টি বিষয় স্পষ্ট করতে চেয়েছে। যার অন্যতম আদিবাসীদের আরও কাছে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, চা বলয়ের দলের শক্তিক্ষয় রোখা। যে দু’টি বিষয় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও শাসক দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ।
কুমারগ্রামের এনকেএস বা নিউল্যান্ডস-কুমারগ্রাম-সংকোশ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রকাশের বাবা কৃষ্ণ চিক বরাইকও চা বলয়ের নেতা বলেই পরিচিত ছিলেন। ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাবা-মায়ের মতোই নিউল্যান্ডস চা বাগানে কাজে যোগ দেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পরে সক্রিয় রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয় প্রকাশের। ২০১৩ সালে এনকেএস গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে, প্রকাশকে আলিপুরদুয়ারে দলের জেলা সভাপতি করে তৃণমূল। তাঁর রাজনৈতিক সাফল্য বলতে গত বছর জেলার দু’টি পুরসভায় জয় এবং বিজেপির এক বিধায়ককে তৃণমূলে নিয়ে আসা। এ বার আরও এক বড় দায়িত্ব তাঁকে দিতে চলেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশকে তৃণমূল রাজ্যসভায় প্রার্থী করায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কি কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে যাবে বিজেপি? দলের আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা অবশ্য বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে গত বারের চেয়েও বেশি ভোটে হারবে তৃণমূল।’’