অপরাধী: নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দোষী সাব্যস্ত হওয়া তিন আসামীকে। শিলিগুড়ি জেলা দায়রা আদালতে। নিজস্ব চিত্র
এক পরিবারের তিন জন একসঙ্গে খুন। চার বছরের মাথায় সেই ঘটনার সাজা ঘোষণার সময়ে বিরলতম বলে ব্যাখ্যা করলেন বিচারক। ফাঁসির সাজা দিলেন দোষী তিন জনকেই। তার পর থেকে বিরলতম এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শিলিগুড়ি জুড়ে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের অবসরকালীন প্রাপ্য দিয়ে দোতলা তৈরি করছিলেন প্রদীপ বর্ধন। তাঁর বাড়িতে কাঠের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে আসে সহদেব, দিপু এবং চিরঞ্জিৎ। স্থানীয় ছেলে তারা। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে কাজ করে তারা। একটি দরজায় গোলমাল ছিল। পুজোর আগেই তা ঠিক করে দিতে তাদের আসতে বলেন প্রদীপ। পরে তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন, ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যেবেলা শিবমন্দিরে এসে তিন জন মদ খায়। সে দিন বৃষ্টি পড়ছিল। বাড়িতে ঢুকে প্রদীপকে সঙ্গে নিয়ে তারা দোতলায় যায়। রঙের কাজ চলছিল। সেখানে পুজোর বকশিস চায় মিস্ত্রিরা। প্রদীপ রাজি না হলে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারা হয় তাঁকে। এর পরে নীচে রান্নাঘরে তাঁর স্ত্রী দীপ্তিদেবীর কাছে জল চায় দোষীরা। জল দিতে ঘুরলে তাঁকেও শ্বাসরোধ করে মারা হয়। গোলমাল শুনে পাশের ঘর থেকে প্রসেনজিৎ বেরিয়ে এলে তাকেও একই কায়দায় খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দেহগুলিতে একাধিক আঘাত করা হয়। প্রদীপবাবুর মুখে রঙ ঢালা হয়। বাড়ি থেকে সোনা, মোবাইল, এটিএম কার্ড নিয়ে পালিয়ে যায় তিন জন। পরদিন সকালে রঙ মিস্ত্রি কাজ করতে এলে পুলিশ জানতে পারে।
ঘটনার তদন্তে শিলিগুড়ির তৎকালীন ডিসি শ্যাম সিংহের নেতৃত্বে মাটিগাড়ার ওসি দীপাঞ্জন দাস, মৃন্ময় ঘোষ এবং নীতেশ লামাকে নিয়ে বিশেষ দল গঠন করে পুলিশ। ঘটনার পরে গা ঢাকা দেয় অভিযুক্তরা। মোবাইলও বন্ধ করে রেখেছিল তারা। নিহত তিন জনের ফোনের নম্বর ধরেই খোঁজ শুরু করে পুলিশ। ১৬ সেপ্টেম্বর সহদেব তার সিম প্রদীপবাবুর ফোনে ভরে একটি নম্বরে মিসড কল দেয়। তখনই তা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার নজর চলে আসে। ১৭ সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধরা পড়ে বাকিরাও। ৮৫ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তার পরে নানা জনের সাক্ষ্য সামনে আসে পুরো ঘটনা।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, খুনের হিংস্রতা আদালতকে বিস্মিত করেছে। সরকারি আইনজীবী পীযূষকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘পুরো ঘটনায় একটি অমানবিকতার ছাপ ফুটে উঠেছে বলে আদালতের কাছে স্পষ্ট। দোষীদের হাবভাবে কোনও অনুতাপও লক্ষ্য করা যায়নি। এ সব দেখেই আদালতের মনে হয়েছে, ঘটনাটি বিরলতম।’’ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবেন বলে জানান দোষীপক্ষের আইনজীবী চন্দন দে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আবেদন করেছিলাম, যে হেতু সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এই ঘটনা আঘাত করেনি, তাই এটিকে বিরলতম বলে বিবেচনা না করা হোক। আদালত যেটা ঠিক মনে করেছে, রায় দিয়েছে।’’
শিলিগুড়ির সিপি ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি পুলিশের কাছে এটা উল্লেখযোগ্য দিন। পুলিশের তদন্তেও সঠিকভাবেই খুনে নৃশংশতা প্রমাণ হয়েছে। আদালত তাতে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে আমরা খুশি।’’