ফেরা: পাহাড় থেকে শিলিগুড়িতে নেমে এসেছেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ে লাগাতার বন্ধের জেরে সমতলের শিলিগুড়িতেও টানা আন্দোলন চালাতে কোমর বেঁধেছে একাধিক নাগরিক সংগঠন।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ তো বটেই, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শিক্ষকরাও তাতে সামিল হতে শুরু করেছেন। আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়র, চিকিৎসকদেরও একাংশও মিছিলে সামিল হওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে সেবক রোড, হিলকার্ট রোড, বিধান রোডের ব্যবসায়ীদের একাংশও নানা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। রবিবারের বিশাল মিছিলের পরে ফের আগামী শুক্রবার শিলিগুড়িচে ‘মহামিছিল’-এর ডাক দিয়েছে ‘ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড ইউনিটি’ নামক একটি সংস্থা। সে জন্য এসএমএস, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে লাগাতার প্রচার চলছে। ওই বার্তায় বলা হচ্ছে, বাঘাযতীন পার্ক থেকে বিকাল ৪টায় পাহাড় সমতলের শান্তি-সম্প্রীতি এবং প্রগতির লক্ষ্যে অরাজনৈতিক মিছিল হবে বলা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান করা হয়েছে।
গত রবিবার সকালে বাঘাযতীন পার্ক থেকেই বাংলা ভাগের চেষ্টার বিরুদ্ধে শহরে মহামিছিল হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষের মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মহিলা, ছাত্রীরাও অংশ গ্রহণ করে। কোনও দলের নয়, জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হয়। তবে মিছিলকারীরা দার্জিলিং মোড়ের দিকে যেতে চাইলেও মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের তরফে এ দিন থেকে মিছিলের উদ্যোক্তা বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে মিছিল করার আবেদন করা হয়েছে।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী মিলনপল্লি, শক্তিগড়, পূর্ব বিবেকানন্দপল্লি, আশ্রমপাড়া, হাকিমপাড়ার কয়েক জন যুবক জানান, ‘‘আমরা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। সমতলে থাকা একদল যুবক যুবতী প্রতি দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নানা হুমকি দিচ্ছে। এটা পুলিশ-প্রশাসনের দেখা দরকার।’’
এ দিনই দুপুরে মিছিলকে সফল করার ডাক দেয় অল ইন্ডিয়া নমঃশুদ্র বিকাশ পরিষদ। সংগঠনের তরফে কার্যকরী সভাপতি মুকুল চন্দ্র বৈরাগ্য জানান, আমরাও আগামী শুক্রবারের মিছিল সফল করার জন্য যা যা করার করছি। উত্তরবঙ্গ জুড়ে তাঁদের লক্ষাধিক সদস্য-পরিবার রয়েছে। সকলকেই রাস্তা নামতে বলা হয়েছে। সংগঠনের তরফে এ দিন জিটিএ সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনা, বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলা দায়ের করা দাবি জানানো হয়েছে।
ঘটনা হল, ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে যে মিছিল হয়েছে, তা ঐতিহাসিক বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবব্রত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিয়েছেন। সকলকে মনে রাখতে হবে পাহাড়-সমতল মিলেমিশে ছিল, আছে থাকবে। মিছিল সেই বার্তাই দিচ্ছে। কেউ বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে সকলে য়ে মানবেন না সেটাও স্পষ্ট।’’
শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের অধ্যাপক তথা অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য জানান, তিনিও মিছিলে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়। কয়েকজন একটা দাবিকে সামনে রেখে নিজেদের আখের গোছাবে, সাধারণ মানুষ ভুগবে সেটা হতে পারে না।’’ তিনি মনে করেন, অবিলম্বে বন্ধ তুলে আলোচনায় বসলেই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেওয়া হবে।
প্রাক্তন কলেজ অধ্যক্ষ নানক ভট্টাচার্যের ধারণা, আগামী দিনে শিলিগুড়ির মানুষ, উত্তরবঙ্গের মানুষ আরও বেশি করে রাস্তায় নামবেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গবাসীরা অখণ্ডতার প্রশ্নে যে দায়িত্বশীল সেটা বোঝাতেই পথে নামতে হবে।’’