শোকার্ত: অন্নদা রােয়র মা শান্তি রায় (ডান দিকে)। আছেন ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীও (সাদা পাঞ্জািব পরে)। ছবি: দীপঙ্কর
বাবার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়াও এনআরসি আতঙ্ক কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল ময়নাগুড়ির অন্নদা রায়ের। শুক্রবার অন্নদার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল বড় কামাত এলাকা থেকে। পরিবারের অভিযোগ, এনআরসি আতঙ্ক চেপে বসাতেই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ৩৯ বছরের অন্নদা। এ দিন পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, বেশ কিছু বছর আগে অন্নদার বাবা অমূল্যের নাম ভোটার তালিকায় বাদ যায়। সম্প্রতি ভোটার তালিকায় তথ্য যাচাই হচ্ছে। সেখানেও বাবার নাম খুঁজে পাননি অন্নদা। তাতেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
অন্নদার বাবা অমূল্য এ দিন বলেন, “সাত-আট বছর আগে আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায়। কেন হল, তা জানি না। তবে ছেলেদের নাম ছিল। এনআরসির কথা জানার পরে অন্নদা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমার নাম যে ভোটার তালিকায় নেই, সেটা ওর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।”শনিবার ময়নাগুড়ির বড় কামাতে অন্নদার বাড়ি গিয়েছিলেন বিশিষ্টদের একটি দল। সরোজ চৌধুরী, লোকশিল্পী দীনেশ রায়, সৈয়দ নজরুল হক-সহ সাত জনের একটি দল অন্নদার বাড়িতে গিয়েছিল। নজরুল বলেন, “অন্নদার পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা হয়েছে। যথাসাধ্য সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে সমস্যা শুধু সেখানেই নেই। পুরো গ্রামটাই এনআরসি আতঙ্কে ভুগছে। কারও জমির দলিল নেই, তো কেউ বা পাট্টার কাগজ সামলে রাখেনি। রাজ্যে যে এনআরসি শুরু হয়নি, সে কথা শুনেও ওদের আতঙ্ক কাটেনি।”
বিশিষ্টদের দাবি, পুরো গ্রামে সচেতনতা প্রচার না হলে আতঙ্ক দূর হবে না। অন্নদার পরিবারের তরফে এনআরসি আতঙ্কের কথা উল্লেখ করে ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও সচেতনতা প্রচারের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনে নড়াচড়া শুরু হয়নি বলে খবর। নজরুলের কথায়, “আমাদের কথায় এনআরসি আতঙ্ক কাটবে না। অথচ প্রশাসনের তরফে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেরি হলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।”
এ দিন ময়নাগুড়ি থানা থেকে একটি তদন্তকারী দল অন্নদার বাড়িতে গিয়েছিল। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, পরিবারের লোকেদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেই দলটি গিয়েছিল। ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীও এ দিন অন্নদার বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রী অন্নদার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন, সে কথা পরিবারকে জানান অনন্ত।
প্রশাসন সূত্রের খবর, হঠাৎ করে এনআরসি নিয়ে প্রচার শুরু করলে হিতে-বিপরীত হতে পারে, আতঙ্ক আরও বাড়তে পারে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেই দাবি। সেই মতো নির্দেশ এলে পদক্ষেপ হবে, জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।