রায়গঞ্জের ইনস্টিটিউট মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।
সাহিত্যের পাশাপাশি, নাচ-গান-নাটক, সংস্কৃতির এই সমস্ত শাখায় চর্চা রয়েছে এই শহরের। এবং সেই ঐতিহ্যও বেশ প্রাচীন। তাই উপযুক্ত ম়়ঞ্চ না থাকার দুঃখ রায়গঞ্জ শহরের কোনায় কোনায়। শহরবাসীর আক্ষেপ এতদিনেও সীমিত সাধ্যে ভাল অনুষ্ঠান করার মত কোনও প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হলনা রায়গঞ্জে।
বড় বাজেটে বড় মাপের অনুষ্ঠান করতে হলে ভরসা একমাত্র বিধান মঞ্চ। সেখানকার পরিকাঠামো নিয়েও কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হলেই প্রমাদ গোনেন উদ্যোক্তারা। কারণ কম খরচে যে দু’টি হল মেলে তার যে কোনওটিতে অনুষ্ঠান করতে হলে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। রায়গঞ্জের ‘স্মারণী একটি নাটকের দল’ সংগঠনের সম্পাদক অরূপ ধরের ক্ষোভ, ‘‘ছোট সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি বেশি ভাড়া দিয়ে বিধান মঞ্চ ভাড়া নিতে পারে না। বাকি ছন্দম ও ইনস্টিটিউট মঞ্চে মেকআপ রুম, গ্রিন রুম, আলো, সাউন্ড সিস্টেম ও মঞ্চের পরিকাঠামো ততটা আধুনিক নয়। ফলে, নাটক নাচ ও গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে শিল্পী ও কলাকুশলীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’’ তাছাড়া আসনের অভাবে বহু দর্শক ওই দুটি মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পান না বলেও আক্ষেপ তাঁর।
রায়গঞ্জ কালচারাল ফোরামের সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও রায়গঞ্জ সঙ্গীত সদনের কর্ণধার দীপেন্দু কর্মকার জানান, আধুনিক সব ধরনের পরিকাঠামো থাকায় সারা বছর ধরে বিধান মঞ্চে নানা অনুষ্ঠান লেগে থাকে। তাই বেশির ভাগ সময়ে বিধান মঞ্চ ভাড়া পাওয়া যায় না। ছন্দম ও ইনস্টিটিউট মঞ্চের আলো, শব্দ, মঞ্চের পরিকাঠামোর অভাব-সহ আসনের অভাবে বড় ধরনের নাটক, নাচ ও গানের অনুষ্ঠান পরিবেশন করা সম্ভব হয় না। ছন্দম নাট্য সংস্থার নাট্য নির্দেশক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শহরের নাট্য ও সংস্কৃতি চর্চার স্বার্থে তাঁরা খুব কম ভাড়ায় বিভিন্ন সংগঠনকে মঞ্চ ভাড়া দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই টাকায় বিদ্যুতের খরচ ও কেয়ারটেকারের বেতন মিটিয়ে মঞ্চের আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’’ অন্যদিকে রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুজিত গোস্বামী মনে করেন, শহরেরই ইন্সটিটিউট মঞ্চ সংস্কার হলে সমস্যা অনেকটাই কমত। তিনি বলেন, ‘‘টাকার অভাবে ইনস্টিটিউট মঞ্চটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শুনেছি। আমরা মঞ্চটি সংস্কার করার জন্য লিখিতভাবে রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কাছে তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ করার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’
শহরের তিনটি অনুষ্ঠান মঞ্চের মধ্যে একমাত্র বন্দর এলাকার বিধান মঞ্চে অপেক্ষাকৃত আধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মঞ্চে ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম ও রঙবাহারি আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। ৮৫০টি আসনও রয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই মঞ্চের দিন প্রতি ভাড়া সাড়ে ৮ হাজার টাকা। রায়গঞ্জের রমেন্দ্রপল্লি এলাকায় থাকা ছন্দম নাট্য সংস্থার ছন্দম মঞ্চে আসন সংখ্যা সাড়ে ৪০০। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ওই মঞ্চের দিনের ভাড়া এক হাজার টাকার মধ্যে হলেও ওই মঞ্চে আসনের অভাব রয়েছে। তাছাড়া উন্নত আলো, সাউন্ড সিস্টেম ও মঞ্চ না থাকায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক পরিবেশনের সময় শিল্পী ও কলাকুশলীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। একই পরিস্থিতি রায়গঞ্জের বকুলতলা এলাকার রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক সংগঠনের অধীনস্থ রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট মঞ্চেরও। ৬০০ আসন বিশিষ্ট ওই মঞ্চে আধুনিক আলো, সাউন্ড সিস্টেম, আসন ও মঞ্চ নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই মঞ্চের ছাদ চুঁইয়ে দর্শকদের গায়ে জল পড়ে বলেও জানাচ্ছেন বাসিন্দারা।
ছোট ও বড় মিলিয়ে রায়গঞ্জে ২৫টিরও বেশি নাটক, গান ও নাচের দল রয়েছে। তাই সারা বছরই শহরে অনুষ্ঠান লেগে থাকে। তবে বেশির ভাগ সময়েই এই তিনটি মঞ্চ বুকিং থাকায় ও বিধান মঞ্চ ছাড়া বাকি দু’টিতে বড়মাপের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিকাঠামো না থাকায় শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানভবন ও স্কুল ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা। সংস্কৃতিপ্রেমীদের সবারই ধারণা, শহরে রবীন্দ্র ভবনের কাজ সম্পূর্ণ হলে এমন সমস্যা থাকত না।
(চলবে)